Main Menu

চল যাই মানালি… (কম খরচে ঘোরাঘুরি)

+100%-

manaliপ্রথম রুটঃ ঢাকা থেকে বাই রোড/রেল/এয়ার এ আপনি ৮০০ থেকে ৬,০০০ টাকার মধ্যে আপনার পছন্দ অনুযায়ী পথ এবং বাহন নিয়ে পৌঁছে যান কলকাতা (এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে আগের পোস্টগুলো দেখতে পারেন)। কলকাতা হতে দিল্লী যাওয়ার সবচেয়ে ভাল ব্যবস্থা “রাজধানী এক্সপ্রেস”। দিল্লী যাতায়াতের বিস্তারিত পাবেন দিল্লী-হিল্লি (নিজে নিজে ঘুরে আসুন অল্প খরচে সমগ্র দিল্লী) পোস্ট থেকে।

দিল্লী থেকে মানালি যাওয়ার জন্য “হিমাচল প্রদেশ ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন”- HPTDC এর বাস রয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ০৬:৩০ এবং ০৭:৩০ মিনিটে হিমাচল ভবন, চন্দ্রালোক বিল্ডিং, জনপথ, নিউ দিল্লী থেকে দুটি বাস ছেড়ে যায় মানালির উদ্দেশ্যে। ৫৭০ কিলোমিটার পথে ১৪ ঘণ্টার যাত্রা শেষে সকাল বেলা ৮:৩০-৯:৩০’র দিকে পৌঁছে যাবেন মানালি। এই যাত্রার রুট এমনঃ Delhi – Ambala – Chandigarh – Bilaspur – Mandi -Kullu – Manali। অনলাইন বুকিং দিতে পারেন এখান থেকেঃ http://hp.gov.in/hptdc/Availability.aspx। যে কোন প্রয়োজনে ফোন করতে পারেন এইনাম্বারগুলোতেঃ 01123717473, 01123325320, 011-23716689। এসি ভলভো বাসের ভাড়া ১,৩০০ রুপী। ফেরার জন্য টিকেট করতে মানালির হিমাচল রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (HRTC) বাস স্ট্যান্ড হতে বাস ছেড়ে আসে বিকেল ৫:৩০ এবং ০৬:০০ টায়। ভাড়া ১,৩০০ রুপী, অনলাইনে বুকিং দিতে পারেন। অথবা ফোন করুন এই নাম্বারে 01902-252116, 9816005960।

আপনি এই রুটে আরও বেশকিছু প্রাইভেট কোম্পানীর বাস পাবেন, এসি ভলভো এবং নন-এসি দুটোই, আছে প্রাইভেট কার অথবা ট্যাক্সি সার্ভিসও। বাস ভাড়া নন এসির ক্ষেত্রে ৭৫০-৮০০ রুপী থেকে ভাড়া শুরু আর এসি ভলভো’র ক্ষেত্রে ১,২০০ রুপী থেকে ১,৫০০ রুপী’র মধ্যে। ট্যাক্সি অথবা প্রাইভেট কার ভাড়া গাড়ীর প্রকার ভেদে ৬,০০০ রুপী থেকে শুরু। আপনার পছন্দ মত ব্রান্ড, মডেল, সিট এসবের উপর ভাড়া নির্ভর করবে।

দ্বিতীয় রুটঃ

এই রুটে আপনি কলকাতা থেকে কলকা মেইলে কলকা হয়ে সিমলা চলে আসেন। চাইলে একদিন ঘুরে দেখুন সিমলা, তারপর এখান থেকে বাসে করে চলে আসুন মানালি। কলকাতা থেকে সিমলা যাতায়াত এবং সিমলা ভ্রমণ নিয়ে জানতে এই নোটে ঢুঁ মারুনঃ এবার চলুন সিমলা (ঘুরে আসি কম খরচে) । সিমলা থেকে রাত ০৮:৩০ মিনিটে মানালির উদ্দেশ্যে HPTDC’র নন-এসি বাস ছেড়ে যায় মানালির উদ্দেশ্যে; ভাড়া ৫৫০ রুপী, চাইলে আপনি অনলাইনে বুকিং করতে পারেন প্রথম রুটে উল্লেখিত লিংক থেকে। সিমলা থেকে মানালি যাওয়ার প্রাইভেট কোম্পানির বাস খুঁজে পাবেন ৪০০-৫০০ রুপী হতে শুরু হবে ভাড়া। চাইলে ট্যাক্সি বা প্রাইভেট কার ভাড়া করেও আপনি সিমলা থেকে মানালি যেতে পারেন; সেক্ষেত্রে ২৮০ কিলোমিটার পথের জন্য আপনাকে ভাড়া গুনতে হবে ৪,০০০ রুপী হতে শুরু করে গাড়ীর প্রকারভেদে ৮,০০০-১০,০০০ রুপী পর্যন্ত। ফিরতি পথে একই সময়ে মানালি হতে সিমলা’র উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে আসে রাত ০৮:৩০ মিনিটে; ভাড়া সেই ৫৫০ রুপী।

থাকাঃ

মানালি’তে থাকার জন্য অনেক হোটেল পাবেন, আপনার বাজেটের মধ্যে মল এলাকার আশেপাশে প্রচুর হোটেল পাবেন। আর একটু ডিলাক্স বা লাক্সারি হোটেল পাবেন মল এলাকা থেকে একটু দূরে। অনলাইনে makemytrip, tripadvisor, booking.com, agoda ইত্যাদি সাইটে ঢুঁ মেরে আপনার পছন্দের হোটেল সহজেই খুঁজে পেতে পারেন। চাইলে অনলাইনে বুকিং করে ফেলতে পারেন, অথবা স্পটে পৌঁছে দরদাম করে আপনার পছন্দ মাফিক হোটেলে চেকইন করতে পারেন। পুরোটাই আপনার ইচ্ছে।

খাওয়াঃ

মানালিতে খাওয়া নিয়ে একটু বিপাকে পরবেন, বেশীরভাগ ভেজিটেরিয়ান রেস্টুরেন্ট। মানালি মল এলাকায় একটি বাঙ্গালী, একটি পাঞ্জাবী এবং একটি মুসলিম রেস্টুরেন্ট খুঁজে পাবেন। আপনার স্বাদের ভিন্নতার জন্য এগুলোতে চেখে দেখতে পারেন। প্রতিবেলা খাবারে আপনার খরচ হবে ১৫০-২৫০ রুপী (একটু বুঝে চললে); ভাল মানের খাবারের জন্য বাজেট রাখুন ৩০০-৪০০ রুপী। আর একেবারে সাশ্রয়ীদের জন্য কোন সাজেশন নেই, চাইলে ৫০ রুপীর কম খরচেও পেটপুজো করে নিতে পারবেন আপনি। 😉

দর্শনীয় স্থান্সমূহঃ

এখন বাকী রইল কি কি দেখবেনঃ

হাদিম্বা দেবী মন্দিরঃ মানালি মল এলাকা থেকে প্রায় এক কিলোমিটারের একটু বেশী দূরত্বে এই মন্দির হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য অন্যতম দর্শনীয় স্থান। ১৫৫৩ সালে নির্মিত এই মন্দির সব সময়েই দর্শনার্থীতে পূর্ণ থাকে।

মানু মন্দিরঃ এটা ২ কিলোমিটার মল এলাকা থেকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান।

ভাসিসথঃ এটা একটি উষ্ণ প্রস্রবন, তিন কিলোমিটার দূরে মল এলাকা থেকে।

তিব্বতীয় মনস্ট্রিঃ অধুনা নির্মিত তিনটা মনস্ট্রি রয়েছে মানালিতে, চাইলে ঘুরে দেখতে পারনে।

সোলাং ভ্যালীঃ বরফ, স্কিয়িং আর ক্যাবল কার নিয়ে ছবির মতন সাজানো স্পট সোলাং ভ্যালী মানালি মল এলাকা হতে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শীতের সময়ে হাজারো পর্যটক ছুটে আসে এই সোলাং ভ্যালীতে স্কিয়িং এর মজা নিতে।

কুলু-মানিকারানঃ মানালি এসে কুলুভ্যালী হয়ে মানিকারান উষ্ণপ্রস্রবণ না দেখে গেলে আপনার যাত্রা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। তাই অতি অবশ্যই কুলু হয়ে মানিকারান যেতে ভুলবেন না।

রোহটাং পাসঃ প্রায় সারা বছর বরফ দেখতে পাওয়া যায় বলে পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্যে ১৩,৫০০ ফিট উচ্চতার রোহটাং পাস। ভয়ঙ্কর কিন্তু অসাধারণ অপার্থিব এক রাস্তা দিয়ে যেতে হবে আপনাকে রোহটাং পাস, সাথে অতি অবশ্যই প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র’র সুরক্ষা।

এই স্পটগুলো ঘুরে দেখার জন্য হিমাচল ট্যুরিজম এর নানান প্যাকেজ রয়েছে। রয়েছে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর নানান প্যাকেজ। মানালি মল এলাকায় গেলে দেখবেন অনেকগুলো কোম্পানি আপনার জন্য অফার নিয়ে বসে আছে। নিজের বাজেটের মধ্যে পছন্দ সই একটা প্যাকেজ নিয়ে ঘুরে আসুন উপরের গন্তব্যগুলো হতে। বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য রয়েছে HPTDC’র বাস সার্ভিস।
Manali-Kothi-Rahla Fall- Rohtangpass & back 310/- (per seat)
Manali- Nagar- Solang & back 260/- (per seat)
Manali-Kullu-Manikaran & back 350/- (per seat)
Manali- Kullu- Bajaura & back 180/- (per seat)

একটি খসড়া প্ল্যান ও বাজেট (অবশ্যই কম খরচে) :

দিন ০০ঃ ঢাকা থেকে রাতের ট্রেনে যশোর অথবা বাসে সরাসরি বেনাপোল। সেখান থেকে দুই দেশের ইমিগ্রেশন শেষে শেয়ার অটো করে বনগাঁও হয়ে ট্রেনে কলকাতা। সেখান হতে রাতের ট্রেনে রুওনা হয়ে যান দিল্লী’র উদ্দেশ্যে। দিল্লীর ট্রেনসূচী দেখে নিতে পারেন এই পোস্ট থেকেঃ

দিন ০১ঃ ট্রেনে সারাদিন এবং রাত্রি যাপন

দিন ০২ঃ সকালবেলা দিল্লী পৌঁছে সারাদিন অবসর সময়, ঘুরে দেখতে পারেন কুতুব মিনার, হুমায়ুন টম্ব, লালকেল্লা, চাঁদনীচক ইত্যাদি। সন্ধ্যের বাসে রওনা হয়ে যান মানালির উদ্দেশ্যে। সারা রাত বাস জার্নি।

দিন ০৩ঃ সকাল বেলা মানালি পৌঁছে যাবেন দশটা/এগারোটা নাগাদ। মল এলাকায় চলে গিয়ে একটি বাজেট হোটেল দেখে চেক ইন করুন। ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ সেরে নিন। এদিন দেখুন হাদিম্বা দেবী মন্দির, মানু মন্দির, ভাসিসথ, তিব্বতীয় মনস্ট্রি, বনবিহার ইত্যাদি। রাত্রি যাপন মানালি।

দিন ০৪ঃ এদিন সকালের নাস্তা সেরে চলে যান সোলাং ভ্যালী, সাথে যদি রাস্তা খোলা থাকে (বরফের কারনে বছরের অর্ধেকের বেশী সময় রাস্তা বন্ধ থাকে) চলে যান রোহটাং পাস। রাত্রি যাপন মানালি।

দিন ০৫ঃ এদিন সকালের নাস্তা সেরে ঘুরে আসুন কুলু-মানিকারান। বিকেলের মধ্যে মানালি ফেরত এসে অথবা কুলু থেকে ধরুন দিল্লীর বাস। সারারাত বাস জার্নি।

দিন ০৬ঃ সকাল বেলা দিল্লী পৌঁছে চাইলে দিল্লী ঘুরে দেখার জন্য দিনের বেলা হাতে রাখতে পারেন। এদিন দেখতে পারেন লোটাস টেম্পল, জন্তর মন্তর, আকসার ধাম, পুরানা কিল্লা, লোদী গার্ডেন। ইত্যাদী। দিল্লী হিল্লী পোস্টে এসবের প্ল্যানিং দেয়া আছে। রাতের ট্রেন ধরুন কলকাতার উদ্দেশ্যে।

দিন ০৭ঃ সারাদিন ট্রেন জার্নি।

দিন ০৮ঃ সকাল বেলা কলকাতা পৌঁছে বেনাপোলগামী বাস ধরুন, শেষ বাস দুপুর একটা পর্যন্ত পাবেন। সেটাও মিস হলে, ট্যাক্সি করে চলে যেতে পারেন। অথবা ট্রেনে বনগাঁ হয়ে ছয়টার আগে বেনাপোল চলে আসুন। এরপর বর্ডার পার হয়ে রাতের বাস ধরুন ঢাকার উদ্দেশ্যে। আর দুপুরের মধ্যে বেনাপোল পৌঁছে গেলে তো কথাই নেই, মধ্য রাতের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে যাবেন আশা করা যায়।

খরচের হিসেবঃ
বাস ভাড়া (ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা) ২,০০০ টাকা
ট্রেন ভাড়া (কলকাতা- দিল্লী-কলকাতা) ২,৫০০ টাকা
বাস ভাড়া (দিল্লী-মানালি-দিল্লী) ২,৫০০ টাকা
হোটেল ভাড়া (দুই রাত) ১,৫০০ টাকা
খাবার (০৮দিন তিন বেলা) ৪,৫০০ টাকা
সাইট সিয়িং এবং অন্যান্য ২,০০০ টাকা

সর্বমোটঃ ১৫,০০০ টাকা।






Shares