নবীনগরে আওয়ামীলীগ নেত্রী খুন, জড়িতদের গ্রেফতারে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
মিঠু সূত্রধর পলাশ :: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক স্বপ্না আক্তার (৪৫) হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার জিনোদপুর ইউনিয়নের বাঙ্গরা গ্রামের ঈদগাহ মাঠে স্বপ্না আক্তারের জানাজায় অংশ নেন স্থানীয় সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদল।
এ সময় তিনি এ হত্যকান্ডের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন। পরে স্বপ্নার মরদেহ জিনোদনপুর ইউনিয়নের চারপাড়া গ্রামের স্থানিয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে স্বপ্না আক্তারের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তার বাম চোখের ওপর থেকে একটি গুলি বের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান জানান, দুর্বৃত্তরা ধারাল অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে স্বপ্নাকে হত্যা করেছে। তবে গুলির নমুনার বিষয়ে ফরেনসিক প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে স্বপ্নার ভাই আমির হোসেন বাদী হয়ে সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে স্বপ্নার বিরোধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও অভিযোগে বলা হয়,বাঙ্গরার উত্তরপাড়ার আপন,বিল্লাল হোসেন,নাহিদ,মেরকোটা গ্রামের যুবলীগ নেতা আলমগীর,চারপাড়ার সাঈদ,নাজিম উদ্দিন ও হুরুয়ার জাহাঙ্গীর ঘটনায় জরিত থাকতে পারে। তবে এর বাইরেও কিছু বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
আমির হোসেনের দায়ের করা ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, স্বপ্না আক্তার আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কারণে দলীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন বিষয়ে অনেকের সাথেই মতবিরোধ চলছে। ওই মতবিরোধের কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী স্বপ্না আক্তার নবীনগর উপজেলার জিনোদপুর ইউনিয়নের চারপাড়া গ্রামের বাবার বাড়িতে থাকতেন। তার বাবার নাম লীল মিয়া। মো:ইরফান (১২) নামে এক ছেলে সন্তান রয়েছে স্বপ্নার।
স্বামী গিয়াস উদ্দিনের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবেই এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আব্দুল হান্নান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) চিত্ত রঞ্জন পাল, নবীনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আসলাম সিকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।এছাড়াও সংরক্ষিত (মহিলা) আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুননেছা বাপ্পি গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাহাঙ্গীর নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। জাহাঙ্গীরের সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে স্বপ্না নিয়মিত চলাচল করতেন বলে জানিয়েছেন স্থানিয়রা।
উল্লেখ্য যে, গত বুধবার উপজেলার সাতমোড়া ইউনিয়নের দশমৌজা বাজারে আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন শেষে রাতে স্বপ্না আক্তার সহ আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ স্ব স্ব বাড়ি ফিরছিলেন।
ওই সময় স্বপ্না একা জিনোদপুর হয়ে তার গ্রামের বাড়ি চারপাড়ায় একটি সিএনজি চালিত গাড়ীতে করে বাড়ি ফিরছিলেন।
পথিমধ্যে জিনোদপুর ও বাঙ্গরার মাঝামাঝি পৌঁছলে, পূর্ব থেকে উৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাঁর উপর হামলা করে। হামলাকারীরা তার কপালে গুলি করে সেখানেই স্বপ্নাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে যায়।