Main Menu

ইউপি নির্বাচন :: নবীগর বীরগাঁওয়ে বহিরাগত আতঙ্ক

+100%-

বীরগাঁওয়বহিরাগতদের আনাগোনা বীরগাঁওয়ে। ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করবে তারা। আওয়াজ এমনই। আর সেকারণে বহিরাগত আতঙ্ক তাড়া করছে নবীনগর উপজেলার এই ইউনিয়নের মানুষকে। বহিরাগত প্রবেশ নিয়ে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে।

ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ মিলেছে। এক মুক্তিযোদ্ধাকে নৌকার নির্বাচন করায় ভোটের পর বাড়ি ছাড়া করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আজমের বাড়ি এই বীরগাঁওয়ে।

বীরগাঁও ইউনিয়নে প্রবেশদ্বার বাইশমৌজা বাজারেই মিললো ক্যাডারের (সন্ত্রাসী) আনাগোনার খবর। মিজানুর রহমান নামে আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক বলেন-আমরা সরকারি  দল, আমরা চুপচাপ। যা আমাদের করা দরকার সেটি করছে তারা। শুনছি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ক্যাডার আনা হবে। তারা কেন্দ্র দখল করবে। ভোট কাইট্টা ফেলবে।

বহিরাগতদের বিচরণ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল বীরগাঁও বাজারে। বৃহস্পতিবার এই বাজারে বহিরাগতরা মহড়া দেয়। মিছিল করে। এ নিয়ে ঘোড়া ও আনারস প্রতীকের  দু-স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।

এখানে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের জহির রায়হান, বিএনপির মো. ফালু, জাতীয় পার্টির মোবারক হোসেন খান, স্বতন্ত্র বর্তমান চেয়ারম্যান কবির আহমেদ (ঘোড়া), কবির হোসেন (আনারস), আনোয়ারুল কাদির খসরু (চশমা)।

আনারস প্রতীকের প্রার্থী কবির হোসেনের আত্মীয় ওয়াকিল সরকার জানান-ওই দিন ৭টা সাড়ে ৭টার দিকে ১৫/২০টি মোটরসাইকেলে করে ২০/৩০ জন বহিরাগত আসে। তারা কবির আহমেদের পক্ষে স্লোগান দেয়। আমরা তখন আমাদের অফিসে বসা। এভাবে একটি এলাকার ভেতর তারা কেন আসবে সেটি আমাদের দেখার বিষয় আছে বলে আমরা এগিয়ে গিয়ে কথা বলি। তখন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান কবির আহমেদ আমাদের অফিসে এসে প্রার্থীর সঙ্গে বসে মিটমাট করেন। ওয়াকিল জানান- তারা প্রতিদিনই আসছে। এসেই কতো কিছু বলছে। এই ছেলেপেলেগুলোর লক্ষণ ভালো না। আমাদের বলা হচ্ছে, যারা আসছে তাদেরকে নবীনগর থানার ওসির বাপেরও ক্ষমতা নাই কোনো কিছু করার। পাওয়ার ফুল এই বহিরাগতরাই আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বীরগাঁওয়ে। কবির হোসেনের সমর্থকরা বলছেন বহিরাগতরা জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী কবির আহমেদের পক্ষে এলাকায় আসা যাওয়া করছে।

তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান কবির আহমেদ বলেছেন আমার বাড়িতে মেহমান আসতেই পারে। যারা এসেছিল তারা জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তিনি বলেন- আমি আল্লাহ ও জনগণের ওপর ভরসা করি। আমার বহিরাগতের কোনো দরকার নাই। বহিরাগতরা কি আমারে ভোট দিয়া দিব? তার অভিযোগ- দলের প্রতীক যারা পেয়েছেন তারাই ভোট কাইট্টা নেয়ার কথা বলছেন। রেজাল্ট চেইঞ্জ করে দেবে বলছে। আমার কথা আমি ভোট কাটতে দেবে না। সংখ্যালঘুরা তাদের হুমকিতেই আতঙ্কে আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের কবির হোসেন বলেন- এক স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেক ফাপড় দিচ্ছে। জনগণকে যথেষ্ট ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমার নিজেরও নিরাপত্তা নাই। আমি বীরগাঁও বাজারে এলে আমাকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল মারা হয়। আমার চাচার সিএনজি অটোরিকশায় হামলার চেষ্টা হয়েছে। আমি নির্বাচন কমিশনের আইনের চেয়েও আচরণ বিধি মানার ক্ষেত্রে খুব বেশি সতর্ক। কোনো  মিছিল-মিটিং করি না। আমি জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোবারক হোসেন খান দোষেছেন আনারসের কবির হোসেনকে। তিনি বলেন, তার লোকজনই ভোট কাটার চিন্তা করছে। তারাই উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। আর কেউ এমন চিন্তাভাবনা করে না। বিএনপির  প্রার্থী মো. ফালু মুক্তিযোদ্ধাদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বিএনপিতো এমনিতেই ঠাণ্ডা। দল থেকে মনোনয়ন দিছে বলে নির্বাচন করছি। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি প্রার্থী একই বাড়ির। এই ইউনিয়নে প্রথমে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল  স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতীকের আনোয়ারুল কাদির খসরুকে। তিনি বলেন আমিতো নেতা না। বিএনপির কর্মী। তাই আমাকে বাদ দিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। খসরু এরআগে ২০০৩ ও ২০১১ সালে নির্বাচন করে প্রথমে ১২৬ ও পরে ৩ শ ভোটে পরাজিত হন জানিয়ে বলেন তখন নির্বাচন সুষ্ঠু  সুন্দর হয়েছে বলে মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখনকার অবস্থা ভীতিকর। আলোচনা আছে ফালুকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে কৌশল হিসেবে। একই বাড়ির হওয়ায় সে নৌকার ভোটে ভাগ বসাবে। বিএনপি প্রার্থী ফালু এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর ডামি প্রার্থী বলেও আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী জহির রায়হান দুর্গারামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন নৌকায় ভোট দেয়ার চিন্তা করলে তারা কেন্দ্রে যেতে পারবে না বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। দুর্গারামপুর এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের সূত্রে দুর্গারামপুরের একজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ মুক্তিযোদ্ধা বলেন- অনেক সমস্যার মধ্যে আছি। দুর্গারামপুরে বিএনপি কর্মী শাহিন ভয়ভীতি আর হুমকি দিচ্ছে বলে জানান ওই গ্রামের অনেকে। আমতলীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাপ মিয়াকেও হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাকে সরাসরি কিছু বলেনি। অন্যদেরকে বলেছে আমি নৌকার নির্বাচন করছি। তাতে তারা সন্তুষ্ট না। এখানেও হুমকি-ধমকিতে সক্রিয় বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা। নির্বাচনের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেছি সাধারণ অনেক ভোটারের সঙ্গে। তারা মুখ খুলছেন কম। বীরগাঁও চকবাজারে কথা হয় ইতালি প্রবাসী রাজু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন- কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। এখানকার নির্বাচন আর ইতালির নির্বাচন এক না। শিবপুর গ্রামের কালা মিয়া বলেন সবার অবস্থাই ভালো। গ্যাঞ্জাম-গণ্ডগোল হবে কিনা বুঝতে পারছি না। বীরগাঁও ইউনিয়নে অন্য এক চিত্র দেখা গেছে। ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র বাইশমৌজা বাজারে ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী তার অফিস সাজিয়েছেন ঘোড়া মার্কার পোস্টারে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করছেন। অবশ্য এ নিয়ে ক’দিন আগে হামলার শিকার হন যুবলীগের এই নেতা। ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন- যুবলীগ নেতার অফিসে নৌকার পোস্টার লাগাতে গেলে সে বাধা দেয় এবং পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে দেয়। এরপর যারা  পোস্টার নিয়ে গিয়েছিল তারা তাকে ঘুষি দেয়। গাছতলা গ্রামের অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বলেন বাইশমৌজার ঐতিহ্য আছে এখানে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারে না। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকবে যদি বাইরের লোকজন এসে এখানে কোনো কিছু করার চেষ্টা না করে। বহিরাগতরা এলেই পরিস্থিতি খারাপ হবে। বীরগাঁও ইউনিয়নসহ নবীনগর উপজেলার ১১ ইউনিয়নে নির্বাচন হবে আগামী ৩১শে মার্চ। বীরগাঁও ছাড়াও কাইতলা দক্ষিণ, নাটঘর ও নবীনগর পূর্ব ইউনিয়নে উত্তেজনা রয়েছে। এসব ইউনিয়নের কোনো কোনোটিতে আওয়ামী লীগ, বিদ্রোহী প্রার্থী ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ১১ ইউনিয়নের ১০৩ কেন্দ্রের মধ্যে ৬৬টি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ইউনিয়নের ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪২ হাজার ১৩০। নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন- যেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে সেখানেই সমস্যা। বীরগাঁও ইউনিয়নে বহিরাগতরা যাতে ঢুকতে না পারে সেব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোটের দিন বীরগাঁও সহ আরও কয়েকটি ইউনিয়নে যথেষ্ট ফোর্স দেয়া হবে।সূত্র:: মানব জমিন






Shares