Main Menu

বাতাসচালিত মোটরসাইকেল

+100%-

একবার বাতাস ভরে এই মোটরসাইকেলটি চালানো যাবে টানা ৪০ কিলোমিটার। চলবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে। এটি বানিয়েছেন চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. নুরুজ্জামান। জানাচ্ছেন রাশেদ আহমদ খান

জ্বালানি হিসেবে তেল-গ্যাস লাগে না, লাগে না ব্যাটারিও। শুধু বাতাস দিয়েই চলে এ মোটরসাইকেল। দেশে জ্বালানিসাশ্রয়ী ও বায়ুদূষণ রোধে যানটি তৈরির পরিকল্পনা মাথায় আসে যন্ত্র-প্রকৌশলের শিক্ষার্থী মো. নুরুজ্জামানের। দুই বছরের চেষ্টায় ২০১৩ সালে পুরোপুরি সফল হন তিনি। দুজন আরোহী নিয়ে মোটরবাইকটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে।

বাতাসে ভেসে ভেসে

২০১১ সালের মার্চ থেকে তিনি এই মোটরবাইক বানানোর কাজ শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে বাইকের ইঞ্জিন বানানোর কাজটা শেষ করেন গত বছরের জানুয়ারিতে। আর সেই বছরের সেপ্টেম্বরে মোটরবাইকটি চট্টগ্রামের হাইওয়েতে পরীক্ষামূলকভাবে চালান।

এয়ার কম্প্রেসড ইঞ্জিনে তৈরি এই মোটরসাইকেল। এতে বিশেষভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে একটি হাইড্রোলিক গিয়ার বক্স ও একটি সংকুচিত বাতাস ভর্তি সিলিন্ডার। হাইড্রোলিক গিয়ার বক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি সিলিন্ডারে বাতাস সঞ্চিত হয়। সেই বাতাসেই চলে এই মোটরবাইক।

এই বাইকের বডি তৈরি করা হয়েছে শুধু কাঠ, লোহার অ্যাঙ্গেল ও মেটালশিট দিয়ে। আর ইঞ্জিন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম, পিতল, ঢালাই লোহা। এর ইঞ্জিনে আগুনের স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয় না; ফলে ইঞ্জিন থাকে ঠাণ্ডা। তাই বিস্ফোরিত হয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও নেই।

প্রতি কিলোমিটার ৯১ পয়সা

এতে বাতাস ভরা বাবদ খরচ হয় প্রতি কিলোমিটারে মাত্র ৯১ পয়সা। এ ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। নুরুজ্জামান বাইকটির নাম দিয়েছেন, ‘এয়ারবাইক’। এটি তৈরিতে তাঁর খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তৈরির পর বাইকটি হবিগঞ্জ শহরে এবং নুরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি রীচিতে চালানো হয়েছে।

একজন নুরুজ্জামান

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রীচি গ্রামে নুরুজ্জামানের জন্ম। বাবা সৈয়দ মো. আলী পেশায় কৃষক। নুরুজ্জামানের শিক্ষাজীবন শুরু হবিগঞ্জের শায়েস্তানগর গাউছিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায়। এখান থেকে হাফেজি সম্পন্ন করে তিনি নবীগঞ্জ ফুলতলি গাউছিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন।

ছোটবেলা থেকেই টান ছিল যন্ত্রপাতির প্রতি। তাই ২০১০ সালে ভর্তি হলেন চট্টগ্রাম শ্যামলী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে। এখন তিনি স্বয়ংক্রিয় মোটরযানের ওপর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

‘এয়ারবাইক’ মোটরসাইকেলটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা যেতে পারে। এ জন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন। নুরুজ্জামান জানান, সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশে কম দামি এবং জ্বালানিবিহীন এই মোটরবাইকের প্রসার সম্ভব। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্বে অনেক দেশেই কাজ চলছে। কিছুদিন আগে ফ্রান্সের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, আগামী ২০১৬ সাল নাগাদ এই প্রযুক্তির গাড়ি রাস্তায় চলবে। সরকারি সাহায্য পেলে ২০১৪ সালের মধ্যেই আমার এই প্রযুক্তি দেশের রাস্তায় চলতে সক্ষম। শুধু তা-ই নয়, চাইলে এই প্রযুক্তি অন্যান্য যানবাহনেও ব্যবহার করা যাবে।’

আরো আবিষ্কার

হাফেজ নুরুজ্জামান আরো কিছু প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে সমুদ্রের ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন, সৌর পাম্প (সূর্যের তাপের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে পানি ওঠানো) এবং রোবটিক পা তৈরির কাজও প্রায় শেষের দিকে।






Shares