Main Menu

পিপি পদ ছাড়লেন মাসুম, গুডবাই জানালেন ব্রাহ্মণবাড়িয়াকেও

+100%-

111862_b6
ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই আর থাকবেন না মহিউদ্দিন খান মাসুম। বুধবার বিকালে পাবলিক প্রসিকিউটরের পদ ছাড়ার আগে জেলা জজ কোর্টের নিচে দাঁড়িয়ে কয়েকজন সহকর্মীকে এ কথা বলেন তিনি। ক্ষোভের সঙ্গে সঙ্গে চোখও ছিল অশ্রুসজল। বারবার রুমালে চোখ মুছছিলেন। দ্রুত পদত্যাগ করে চোখ মুছতে মুছতেই আদালত এলাকা ত্যাগ করেন মাসুম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহিংস ঘটনায় উসকানি দেয়ার অভিযোগে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ৩ দিন পর গতকাল বিকাল পৌনে ৪টায় পাবলিক প্রসিকিউটের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন খান মাসুম। জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের কাছে তিনি তার পদত্যাগপত্র তুলে দেন। এর আগে জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটরের কক্ষে বসে তিনি তার পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। একদল সহকর্মীসহ জেলা প্রশাসকের কক্ষে ঢুকেন মাসুম। জেলা প্রশাসক তখন ফোনে কথা বলছিলেন। এই অবস্থায় পদত্যাগপত্রটি তুলে দেন জেলা প্রশাসকের হাতে। জেলা প্রশাসক কিছুটা অবাক। এ সময় মাসুমের সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী আজাদ রকিব তুরান, মো. ওসমান গণি, সৈয়দ তানভীর হোসেন কাউসার, এমদাদুল হক চৌধুরী, নাজমুল হক রিটন, মো. শাহপরান প্রমুখ। মহিউদ্দিন খান মাসুম তার দায়িত্ব অতিরিক্ত পিপি নূর মোহাম্মদ জামালের কাছে বুঝিয়ে দেন। এর আগে বিকাল পৌনে ৩টার দিকে মহিউদ্দিন খান মাসুম আদালতে আসেন নিজের গাড়িতে করে। তাকে দেখে জজকোর্টের বারান্দার নিচে ছুটে আসেন অতিরিক্ত পিপি নূর মো. জামাল, আজাদ রকিব তুরান ও ওসমান গণি। কয়েক মিনিট কথাবার্তা বলেন তাদের সঙ্গে। এ সময় ক্ষোভ ঝড়ে পড়ে তার। বলেন শুধু পিপির পদ থেকেই নয় তিনি সবকিছু থেকেই পদত্যাগ করবেন। পল্লী বিদ্যুতের উপদেষ্টার পদ থেকে আজই (গতকাল) পদত্যাগ করবেন। আশুগঞ্জ সারকারখানাসহ বিভিন্ন ব্যাংকের আইন উপদেষ্টার পদ থেকেও পদত্যাগ করবেন। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আর ব্রাহ্মণবাড়িয়াই থাকুম না। ঢাকায় চলে যাব, আজ নতুবা কাল। এরপর চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাব। এসব বলার পর এই সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিজের অফিস কক্ষে যান। সেখানে চলে পদত্যাগপত্র লেখার কাজ। এ সময় পিয়নকে বলেন এখানে থাকা তার ফাইলপত্রসহ ব্যক্তিগত জিনিসপত্র গাড়িতে নিয়ে রাখতে। পদত্যাগপত্র লেখা হলে তাতে স্বাক্ষর করেন তিনি। এরপর সবাই মিলে যান জেলা প্রশাসকের এখানে। তিনি গত ৬ বছর পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এর আগে শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাম্প্রতিক ঘটনায় উসকানি দেয়ার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃৃত হন মহিউদ্দিন খান মাসুম। মাসুম জেলার বড় মাদরাসা হিসেবে পরিচিত জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ঘটনার সময় মাদরাসার পক্ষ নিয়ে উসকাানি দেয়ার অভিযোগ ওঠে। শনিবার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এক সভায় দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে সর্বসম্মতভাবে জেলা কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদ থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেন স্থায়ীভাবে তাকে বহিষ্কার করা হবে না সেই জবাব চেয়ে নোটিশ দেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে ছিলেন ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক।
তবে মাসুম বলেছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের পদক্ষেপেও তিনি মেন্টালি শকড রয়েছেন। মহিউদ্দিন খান মাসুম মানবজমিনকে বলেন- সকালে ডিসি সাহেবের কক্ষে আল মামুন সরকারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তাকে বলেছি ভাই আমার কি অপরাধ বলেন। আগেতো ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। সেটি থেকে বাদ দিলেন। এখনতো কোনো পদেই নাই। আমাকে জিজ্ঞেস করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হতো। আমি বলেছি কোনো মহল আমার কারণে কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ক্ষমাপ্রার্থী। সারেন্ডার করছি। নিজে থেকেই এভাবে একটি লিখিত দিয়ে দেয়ার কথা বলেছি তাকে। জ্ঞানবশত কোনো অন্যায় করিনি আমি। তারপরও বলেছি অজ্ঞতাবশত কোনো ভুল হয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি গন্ডগোলটা থামাতে পেরেছিলাম। এতে আমি সাকসেসফুল হয়েছি। আমি ডিসির হুকুমে ভোর ৫টা ৫ মিনিটে মাদরাসায় পৌঁছি। সারাদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করি। তা না হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেদিন ম্যাছাকার হয়ে যেত। এই আগুন সবাইকে পেত। ঐদিনতো আমাকে ছাড়া আর কাউকে মাদরাসার ভেতর দেখা যায়নি। তিনি বলেন- আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আওয়ামী লীগের এই তৎপরতায় আমি মেন্টালি শকড। এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিদেয় নিচ্ছি। সেজন্য সবকিছু থেকে পদত্যাগ করছি। ঢাকায় গিয়ে আমার পারিবারিক চিকিৎসককে দেখাবো। তার পরামর্শ নিয়ে বিদেশে যাবো। কি বলবো ভাই আওয়ামী লীগের ফাউন্ডার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন আমার ভাই। শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীতে আমার পরিবারের কথা লিখা আছে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান আমার ভাগ্নে। এর চেয়ে বেশি আর কি হতে পারে।

সূত্র :: মানব জমিন






Shares