Main Menu

রাজনীতি করি বলে আত্মীয়রা দাওয়াত দিত না: ফজিলাতুননেসা বাপ্পী

+100%-

তরুণ নারী রাজনীতিকদের মধ্যে পরিচিত মুখ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুননেসা বাপ্পী। এরশাদ আমল থেকেই মিছিল-সমাবেশে নিয়মিত মুখ তিনি। গেছেন কারাগারেও। আইন পেশাতেও নাম করেছেন। সংসদে ধারালো বক্তব্য দিয়েও আলোচনায় তিনি। স্বপ্ন দেখেন, একদিন সরাসরি ভোটে জিতে সংসদে যাবেন। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় বাপ্পী তুলে ধরেছেন তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিনগুলোর কথা। তুলে ধরেছেন ভবিষ্যত পরিকল্পনা আর রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শন। আজ দেখুন সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানিম আহমেদ।

টানা দুবার সংরক্ষিত নারী আসন থেকে আপনি সংসদ সদস্য হয়েছেন। আগামীতে কি সরাসরি ভোট করার ইচ্ছা আছে?

আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে অনেক ত্যাগী নেতা আছে। আর দলের মনোনয়নের জন্য একটি সংসদীয় বোর্ড রয়েছে, সেখানে যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই মনোনয়ন দেবে। আমার দল নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। বর্তমান সংসদে সংরক্ষিতসহ মোট ৭১ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছে। যা ২১ শতাংশেরও বেশি। নারীর ক্ষমতায়নে আমরা বিশ্বের সপ্তম।

প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি ৯৬ সালের পর সংরক্ষিত আসনের সংসদ ছিলেন। তাঁরা তারা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। আর এখন আমরা যারা আছি, তাঁরা মূল ধারায় যাওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করছি। মনোনয়ন চাইবার মত এবং পেলে নির্বাচন পরিচালনা করবার মত সক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন করতে পারি সেই দিকে নজর দিচ্ছি।

নির্বাচন করলে কোন আসন থেকে দাঁড়ানোর ইচ্ছা রয়েছে?

সামনে আরও দেড় বছর সময় রয়েছে। আগামীতে আমি চিন্তা করবো।

সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের কথা উঠেছিলো একসময়…

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রস্তাব আসতেই পারে। এ প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। বর্তমান সংসদে ৩৫০ জন সংসদ সদস্য রয়েছে। নারী সংসদ সদস্য সরাসরি নির্বাচিত হলে ভালো ফলাফল হতো। এ জন্য আমাদের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা হয়েছে। আমাদের দলও এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। আমি মনে করি, সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হলে এর দায়বদ্ধতা অনেক বেশি হতো।

কয়েকজন ছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের সেভাবে সক্রিয় দেখা যায় না কেন?

সংসদ সদস্যদের কাজের অনেক ক্ষেত্র থাকে। একেকজন একেক ধরণের কাজ করে। আপনারা হয়তো অন্য আরেকজন নারী এমপির নাম জানেন না। যিনি নীরবে-নির্ভৃতে কাজ করছেন। তাঁর এলাকার প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন। তবে হয়তো প্রচারের অভাবে তার সম্পর্কে জানেন না।

আমি ঢাকায় রাজনীতি করেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। ছাত্রজীবনে থেকেই আমার একটা পরিচিতি ছিল। আবার আইনজীবী হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলার আইনজীবী ছিলাম। আইন কথা নামে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনাও করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন সমাজিক ইস্যুতে কাজ করেছি বলেই সবার বাড়তি একটু সহযোগিতা পেয়েছি।

আপনার ভবিষ্যত রাজনৈতিক পরিকল্পনা কি?

রাজনীতিতে উদ্দেশ্য হলো জনগণের জন্য কাজ করা। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় কাজ করা এবং নিজেকে জনগণের জন্য সততা এবং নিষ্ঠার সাথে এগিয়ে যাওয়া।

নারী সংসদ হিসাবে আপনি কোন প্রতিবন্ধকতায় পড়েছেন?

পুরোটা পথই ফুল বিছান, আর আমি সুন্দর করে হেঁটে যাব, সেই আশা আমি করি না। রাজনৈতিক পথ সবসময় বন্ধুর। এরশাদবিরোধী আন্দোলন করে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া সরকারবিরোধী আন্দোলন করে কারাবরণ করেছি। প্রতিবন্ধকতার মাঝে ইতিবাচক কর্মকাণ্ড সফলভাবে সমাধান করাই আনন্দ।

আপনার রাজনীতিতে হাতেখড়ি কীভাবে?

আমার নানা বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। ছোটবেলায় নানার মুখে শেখ রাসেল হত্যার কাহিনি শুনি। যা আমার মনে দাগ কেটেছিল। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় স্কুল লাইব্রেরিতে ‘আমি রাসেল’ বইটা পড়লাম। সেখানে রাসেলের করুণ মৃত্যূটা আমার মনে পড়ল। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি আইন বিষয়ে পড়লাম। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি।

কোনো বাধা ছিল?

অনেক বাধা ছিলো। আমরা সাত ভাইবোন। সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। আমার তিন ভাইবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্বজনদের ইচ্ছা ছিল, আমি জজ হব। আমি যখন এরশাদবিরোধী আন্দোলন করতাম, তা তারা পছন্দ করতো না। রাজনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনদের সাথে সংগ্রাম করতে হয়েছিল। অনেক সময় দেখা গেছে, আত্মীয় স্বজনের দাওয়াতে আমাকে আসতে বারণ করা হতো। কিন্তু আমার বাবা অতন্দ্র প্রহরীর মত এবং বড় ভাই (আবুল আজাদ, নজরুল গবেষক) সাহায্য করেছেন এবং বিয়ের পর আমার স্বামী সহযোগিতা করেছেন। আমি নিজেতে তৈরি করেছি কিন্তু তাদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ।

আমি এমপি হয়েছি তরুণ বয়সেই। এরপর আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফোন করে আমার বাসায় এসেছিলেন। স্যার আমাকে বললেন, ‘তোমার আম্মুকে ডাক।’ আমি বললাম, ‘আম্মা তো এখানে থাকেন না।’ তখন তিনি বললেন, ‘তার সাথে কথা হয়েছে। তিনি বাসায় আছেন।’

আমি পরে আম্মার সাথে ফোনে কথা বললাম, তিনি আমাকে বললেন, ‘আমার সাথে তো কথা হয়নি।’ পরে স্যারের কাছে গিয়ে বললাম, ‘আপনি কার কাছে এসেছেন?’। তিনি আমাকে বললেন, ‘আমাদের স্কুলে পড়তো সেই এমপি হয়েছে। আমি তাঁর সাথে দেখা করতে এসেছি।’ আমি বললাম, ‘স্যার আপনি আমার কাছে এসেছেন।’

নারীদের অনেক প্রতিবদ্ধকতা রয়েছে। তা কীভাবে দুর করা যাবে?

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আমাদের অনেকগুলো আইন রয়েছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরও কাজ করছে। কিন্তু আইন করে তো এ সমস্যা সমাধান হবে না। কারণ সবার আগে প্রয়োজন নিজের মূল্যবোধের পরিবর্তন। কারণ আমাদের সমাজে দীর্ঘকাল ধরেই নারী অধিকারকে একটি কুসংস্কার বলে মনে করছিল। নারীকে অন্ধকারে আবদ্ধ করেছিল। সেই থেকে আমাদের উত্তরণ হচ্ছে। কিন্তু এটা রাতারাতি হবে না। সময় দিতে হবে।

পরিসংখ্যান ব্যুারোর হিসাবে ৮২ শতাংশ নারীই গৃহে নির্যাতিত হন, সেটা স্বামী, শাশুড়ি, ননদ বা পারিবারিক সদস্যদের দ্বারা। কাজেই পরিবর্তনটা নিজের স্বত্তা থেকেই করতেই হবে। নিজেকে বলতে হবে, আমি নারী হয়ে যেন অন্য নারীর খড়্গ না হই।

ঢাকাটাইমস/২৯জুন/টিএ/ডব্লিউবি






Shares