Main Menu

মৌলবাদের আগুনে ছাই আলাউদ্দিনের স্মৃতিচিহ্ন

+100%-

ajkalহাসিবুল হক: সঙ্ঘর্ষে এক মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে দুদিন ধরে তাণ্ডবে পুড়ে ছাই হল ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের প্রবাদপ্রতিম সুরসম্রাট উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের সঙ্গীতাঙ্গন। এই ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইসলামি মাদ্রাসার ছাত্র ও তাদের সহযোগী মৌলবাদে আচ্ছন্ন হিংসাশ্রয়ী জনতা। গোটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর জুড়ে হিংসার তাণ্ডবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে রেল স্টেশনে, ভাষা শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিস্তম্ভ ও তার সংলগ্ন সাংস্কৃতিক ভবনে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস সাহিত্য–সংস্কৃতি পরিষদভবন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশুনাট্যম সংস্থার ভবন, তিতাস ললিতকলা আকাদেমি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল। লুটপাট করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাজার ও বিভিন্ন দোকানপাটে। উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ জন্মেছিলেন অবিভক্ত বঙ্গের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরেই। তাঁর ঐতিহাসিক বাসভবনের সংলগ্ন তাঁর বালক বয়সের সঙ্গীত সাধনার ঘরটিতে এখনও তাঁর প্রশিষ্যরা একালে কিশোর–কিশোরীদের সঙ্গীতসাধনার দীক্ষা দেন। খাঁ সাহেব তরুণ বয়সে সেকালের দেশীয় রাজ্য মাইহারে চলে যান। মাইহারের রাজা ব্রিজনাথ সিং ছিলেন তাঁর গুণগ্রাহী। ১৯৫৬ সালে একবার আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব একবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাঁর পৈতৃক ভিটেয় এসেছিলেন। সে সময় তিনি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর সঙ্গীতসাধনার বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র। বহু স্মারক, অনেক ছবি, চিঠিপত্র। সবই তিনি তাঁর ছোটবেলার সঙ্গীতসাধনার ঘরটিতে সাজিয়ে রেখে যান। তিনি প্রয়াত হওয়ার পর সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাল‍য় নামে পরিচিত হয় ওই কক্ষটি। ২০১১–য় বাংলাদেশ সরকার এখানে উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ জাদুঘর গড়ে। পুড়িয়ে একবারে ছাই করে দেওয়া হয়েছে উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁয়ের স্মৃতিবাহী ওই রেওয়াজ কক্ষটি ও স্মারক সামগ্রী বোঝাই জাদুঘর। যেসব জিনিস পুড়ে ছাই হয়েছে, পুলিস জানিয়েছে, সেগুলি হল, খাঁ সাহেবের ব্যবহৃত দুটি সরোদ, দুটি বেহালা, একটি সন্তুর, একটি ব্যাঞ্জো, একটি সারোঙ্গি। ছাই হয়ে গেছে তাঁর হাতে লেখা ২৫টি চিঠি। মাইহারের রাজা ব্রিজানাথ সিংয়ের দেওয়া রেওয়াজ করার দুটি কার্পেটও ভস্ম হয়ে গেছে। খাঁ সাহেব হজ পালনে যখন গিয়েছিলেন সৌদির রাজা তাঁকে দিয়েছিলেন জায়নমাজের আসন, পুড়ে গেছে তাও। তাঁর নিজের বহু ছবি–সহ বিদেশের রাষ্ট্র্রপ্রধানদের সঙ্গে তাঁর অনেক ছবি— সেসবও ছাই। পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে সঙ্গীতালয়ের দেওয়াল, ছাদের একাংশ ভেঙে পড়েছে। ঢাকায় সঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে বুদ্ধিজীবী–সহ স্তম্ভিত। ক্ষোভ, প্রতিবাদের মিছিল বের হচ্ছে রোজই। উদ্বিগ্ন হাসিনা সরকার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর জুড়ে এই তাণ্ডবের সময় পুলিস নিষ্ক্রিয় ছিল, এমন অভিযোগ ওঠায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী পুলিস সুপার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানার অফিসার–ইন–চার্জকে বদলি করা হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, গত সোমবার সন্ধেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টি এ রোডে এক বয়স্ক বাইক আরোহীর সঙ্গে এক মাদ্রাসা ছাত্রের তর্কাতর্কি বাধে। ওই সময় এক দোকানি বাইক আরোহীর পক্ষ নেন। মিটমাটের চেষ্টা করেন। মাদ্রাসা ছাত্রটি চলে যায়। কিছুক্ষণ পর মাদ্রাসা থেকে একদল ছাত্র এসে ওই দোকানিকে মারধর শুরু করলে স্থানীয় দোকানদার, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্ঘর্ষ বেধে যায়। দোকানদারদের পক্ষে যোগ দেন আওয়ামি লিগ কর্মীরা। পুলিস এসে জলকামান ছুঁড়ে, রাবার বুলেট ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেও সোমবার রাত সাড়ে ৭টায় রটে যায় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় পুলিস গুলি চালিয়েছে। বেশ কিছু ছাত্রকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে মাসুদুর রহমান নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এর পরই শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তাণ্ডব। গোটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর চলে যায় ইসলামপন্থী হিংসাশ্রয়ী দুষ্কৃতীদের হাতে। পুলিস গুলিচালনার কথা অস্বীকার করেছে। কিন্তু ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মোবারক বলেছেন, পুলিসের গুলিতেই মাসুদুরের মৃত্যু হয়েছে। গুলি করে তাকে ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিয়েছে পুলিস। ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালের সার্জন ডাঃ হুমায়ুন কবির কিন্তু বলেছেন, আঘাতের চিহ্ন থাকলেও, গুলির চিহ্ন ছিল না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মইদুর রহমান বলেছেন, রেলের আড়াই কোটি টাকার সম্পত্তিহানি হয়েছে। জেলা আওয়ামি লিগ সভাপতি আল মামুন সরকার বলেছেন, তাণ্ডবে গোটা শহরে ৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, তাণ্ডবকারী হিংস্র জনতার ভেতর মাদ্রাসা ছাত্রদের সঙ্গে মিশেছিল বি এন পি–জামাত কর্মীরাও।






Shares