Main Menu

কিংব্যাক মোনেম মুন্নার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

+100%-
বাংলার ফুটবল ভক্তরা পেলে বা ম্যারাডোনা যদি কখনো মারা যায় তাদের মৃত্যুদিবসেও কে সেরা তা স্মরণ করবে অথচ সেই প্রজন্মই চুপ থাকে নিজ দেশের কীর্তিমান ফুটবলার দের ব্যাপারে যেমনটা দেখা যায় ফুটবল জাদুকর সামাদ থেকে শুরু করে কিং ব্যাক মোনেম মুন্না দের স্মরণ করার ব্যাপারে কৃপণতা দেখে ।
বর্তমান যুগের মেসি , রোনালদো , নেইমার, গ্যারেথ বেল, জাভি, ইনেয়েস্তা, দ্রগবা, বেঞ্জেমার চাইতেও আমার সর্বকালের প্রিয় ফুটবলার মোনেম মুন্না র চলে যাওয়ার ১২ বছর হলো আজ মানে ১২ই ফেব্রুয়ারী ।। ২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আমরা হারিয়েছিলাম আমাদের সকলের প্রিয় মোনেম মুন্নাকে যার হাত ধরেই ফুটবলে আমরা পেয়েছিলাম প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা।
কত রকম দিবসই তো আমরা পালন করি অথচ বেমালুম ভুলে যায় দেশের অনেক কৃতি সন্তানের অবদান ।। কোন আওয়াজ ছাড়াই চলে যাবে হয়তোবা আরেকটি মৃত্যুবার্ষিকী ।
আজ নিজেকে বাংলাদেশের একজন ফুটবল দর্শক হিসেবে ভেবে খুব বেশী লজ্জিত মনে হচ্ছে । কারন মোনেম মুন্না একজনই ছিলেন যাকে নুন্যতম স্মরণ করার কাজ আমি সেই বাফুফের কাছে আশা করতেই পারি যার প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সেরা ফুটবলার কাজী সালাহউদ্দিন। বাংলাদেশে যতজন বিদেশী কোচ কাজ করেছেন তাদের প্রত্যেকেই মুন্নার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
‘হি ওয়াজ মিসটেকেইনলি বর্ন ইন বাংলাদেশ’—মোনেম মুন্না সম্পর্কে এ কথাটি বলেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক জার্মান কোচ অটো ফিস্টার। সেই অটো ফিস্টার, যিনি ঘানাকে বিশ্ব যুব কাপের শিরোপা এনে দিয়েছিলেন, সেই ফিস্টার যিনি আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত দেশ টোগোকে বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্তপর্বে নিয়ে গিয়েছিলেন।
মোনেম মুন্নার জন্যে আমাদের দেশে দৃশ্যমান তেমন কিছুই করা হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের তথা ওপার বাংলাসহ দক্ষিন এশিয়ার ফুটবল অঙ্গনে মুন্নার অবদান ভোলার মত নয়। আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে মুন্নার অস্তিত্ব নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। মুন্নার স্মরনে ধানমন্ডির ৮ নম্বর সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে ‘মোনেম মুন্না সেতু’ যেটা আমরা অনেকেই জানি না। আর জানবোই বা কিভাবে? অযত্নে অবহেলায় ফলক চোখ এড়িয়ে যায়।
কেউ খবর ও রাখেনি ইয়াসমীন মোনেম সুরভীর যার কিনা ১২ টি বছর ১২ই ফেব্রুয়ারীতে নিজের বিবাহ বার্ষিকীতে কাটাতে হয় স্বামীবিয়োগের বেদনা নিয়ে যার ১৯৯৩ সালের এই ১২ ফেব্রুয়ারিতেই বিয়ে হয়েছিল মুন্নার সঙ্গে। যার ঠিক ১২ বছর পরেই তিনি হয়েছেন স্বামীহারা। বাংলাদেশ হারিয়েছে দেশসেরা ডিফেন্ডারকে। আবাহনীর সাথে মোনেম মুন্নার বোধহয় আত্নার সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল যার কারণে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শেখ কামালের হাতে গড়া আবাহনীর সাথেই জড়িত ছিলেন।
১৯৮৭ থেকে একটানা ৯৭ সাল পর্যন্ত আবাহনীতে খেলেছেন মুন্না। আবাহনীর হয়ে খেলেই অবসরে গেলেও আবাহনীর ম্যানেজার হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যে আবাহনী মাঠেই ২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কিডনী রোগে তার মৃত্যুর পর শেষ জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৯৯ সালে হঠাৎ তাঁর কিডনি সমস্যা ধরে পড়ে, সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসেন। তাতে খুব কাজ হয়নি, পরের বছরই মেঝ বোনের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় তাঁর শরীরে। তারপর কয়েক বছর ভালোভাবে কেটে গেলে ২০০৪ সালের শেষদিকে আবার সমস্যা গুরুতর হয়ে ওঠে এবং ২০০৫ সালে তিনি পুরো ক্রীড়াঙ্গনকে কাঁদিয়ে চলে যান অন্য ভুবনে।
মৃত্যুর বার বছর পরও বাংলাদেশ পায়নি কোন যোগ্য উত্তরসূরী কিংবদন্তি মুন্নার, যিনি চুম্বকের মতো এক দশকেরও বেশি সময় টেনে রেখেছিলেন লাখ লাফ ফুটবল অনুরাগীকে। যাকে দলে নিতে ১৯৯১ সালে আবাহনী-মোহামেডানের যে কাড়াকাড়ি হয়েছিল সেটাও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সেরা গল্পগুলোর একটি। নব্বই দশকে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের আবির্ভাবে চড়া দামে বিক্রি হওয়া ফুটবলারদের খাতায় নাম লেখান নি মুন্না। আবাহনীতেই থেকে গিয়েছিলেন এবং তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে আবাহনীর মর্যাদা ও অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন।  শুধু এই বাংলায় নয়, ওপারেও এই ডিফেন্ডার ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। ঠিক যেমন আবাহনীর ঘরের ছেলে তেমনিই ছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছেও। তার মৃত্যুর পর চোখের জলে ভেসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বাসীও।
আজকের এই দিনে তাই একটা কথাই বলতে চাই আমি গর্বের সাথে
আমার কাছে মোনেম মুন্নাই এই দেশের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার যিনি সর্বদা রবে নীরবে হৃদয়ে মম।
#এক_নজরে_মোনেম_মুন্না
জন্ম : ৯ জুন ১৯৬৮, নারায়ণগঞ্জ
মৃত্যু : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৫, ঢাকা
ফুটবল ক্যারিয়ার
১৯৮০-৮১ : পাইওনিয়ার ফুটবল পোস্ট অফিস
১৯৮২ : দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল শান্তিনগর
১৯৮৩ : দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
১৯৮৪-৮৫ : প্রথম বিভাগ ফুটবল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
১৯৮৬ : প্রথম বিভাগ ফুটবল ব্রাদার্স ইউনিয়ন
১৯৮৭-৯৮ : প্রথম বিভাগ ফুটবল আবাহনী
১৯৯১-৯৩ : ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কলকাতা
জাতীয় দলঃ-১৯৮৬-১৯৯৭।
লেখকঃ- মোঃ বায়েজিদ মোস্তফা





Shares