Main Menu

চোখের জলে ট্র্যাক-কে বিদায় জানালেন বোল্ট

+100%-

অবিশ্বাস্য একটা দৃশ্যের সাক্ষী থাকল গোটা বিশ্ব।

তিনি ট্র্যাকে শুয়ে ছটফট করছেন আর তাঁকে টপকে ফিনিশিং লাইন পেরিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক প্রতিদ্বন্দ্বী।

জীবনের শেষ রেসে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা ইউসেইন সেন্ট লিও বোল্ট-কে অসহায় ভাবে দেখতে হল, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাঁকে টপকে যাচ্ছেন। একশো মিটার রিলেতে পায়ে ক্র্যাম্প হওয়ায় রেস শেষ করতে পারলেন না বোল্ট। শেষ পর্যন্ত জামাইকান সতীর্থদের কাঁধে ভর দিয়ে ফিনিশিং লাইন পেরোতে হল তাঁকে।

জীবনের শেষ রেসে চোখের জলে ট্র্যাক ছাড়তে হল কিংবদন্তিকে। গোটা বিশ্বও সম্রাটকে বিদায় জানাল চোখের জলে।

এর পরে একটা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জীবনের শেষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যর্থতা কি সত্যিই একটা দাগ রেখে গেল তাঁর সোনালি কেরিয়ারে? টুইটার, ফেসবুক এবং নানা জায়গায় বিশেষজ্ঞদের কথা শুনলে পরিষ্কার, ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। বরং লন্ডন থেকে শূন্য হাতে ফিরলেও বোল্ট কিন্তু এখনও বেশিরভাগের কাছেই সেই ‘জি ও এ টি।’ অর্থাৎ গ্রেটেস্ট অব অল টাইম— সর্বকালের সেরা অ্যাথলিট।

মহম্মদ আলি, মিশায়েল শুমাখার থেকে ডন ব্র্যাডম্যান— পেশাদার খেলোয়াড়ি জীবনের শেষটা এই কিংবদন্তিদের কারও ভাল হয়নি। কিন্তু তা বলে কোনও ভাবেই তাঁদের কেরিয়ারে তার কোনও দাগ পড়েনি। বোল্টের ক্ষেত্রেও তাই হল।

আসলে ইউসেইন বোল্টের প্রভাব  বুঝতে গেলে শুধু ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের গণ্ডিতে তা মাপা সম্ভব নয়। ইউসেইন বোল্ট নামটা সমার্থক হয়ে গিয়েছিল যে কোনও মেগা সাফল্যের সঙ্গে। এই নামটা জুড়ে গিয়েছিল নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার সব রকম লড়াইয়ে। বোল্টকে নিয়ে এক একটা প্রতিক্রিয়া শুনলেই বোঝা যায়, তিনি নিজেকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। বোল্ট যাঁর ২০০ মিটারের বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছিলেন, সেই মাইকেল জনসন একবার বলেছিলেন, ‘‘এই পৃথিবীতে এমন কোনও অ্যাথলিট নেই যে বোল্টের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।’’ জামাইকায় গিয়ে একবার বোল্টের সঙ্গে দেখা করার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসি়ডেন্ট ব্যারাক ওবামা বলেছিলেন, ‘‘এই লোকটার চেয়ে দ্রুত আর কেউ দৌড়তে পারে না। আমি কোটি কোটি লোকের কথা মাথায় রেখেই বলছি।’’

নিজের সম্পর্কে কী বলতেন বোল্ট? তাঁর একটা উক্তি এখনও বিখ্যাত হয়ে আছে— ‘আমি বিদ্যুৎ বোল্ট। আমি ফ্ল্যাশ গর্ডন বা অন্য কেউ নই। আমার নাম বোল্ট। বিদ্যুৎ বোল্ট।’ কেউ কেউ একে দম্ভ ভাবতে পারেন, কিন্তু সেটা ভুল হবে। ট্র্যাকে নামলে যে মানুষটা দানব হয়ে উঠত, বুকে চাপড় মারতে মারতে, প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে তাকিয়ে যে একশো মিটার রেস শেষ করত, সে কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। বোল্টের নিজের কথায়, ‘‘আপনার আচরণটাই হল আসল। যেমন ছোটবেলায় রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় যার সঙ্গেই দেখা হোক না কেন, আপনাকে সুপ্রভাত বলতেই হবে। সবাইকেই বলতে হবে। এক জনকেও বাদ দিলে চলবে না।’’

নিজের অবিশ্বাস্য কেরিয়ারে কী পাননি বোল্ট। একশো মিটার, দু’শো মিটার, রিলে মিলে অলিম্পিক্সে আটটা সোনার পদক। প্রথম অ্যাথলিট হিসেবে পর পর তিনটে অলিম্পিক্সে একশো মিটার, দু’শো মিটারে চ্যাম্পিয়ন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এগারোটা সোনা, দু’টো রুপো। এবং, অবশ্যই একশো মিটার, দু’শো মিটারে বিশ্বরেকর্ডের মুকুট।

এর পর শুধু একটা প্রশ্ন উঠছে। কেন বোল্ট এ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশপে নামলেন? কেন তিনি ২০১৬ অলিম্পিক্সের পরে অবসর নিয়ে নিলেন না? তাঁর তো আর কিছু প্রমাণ করার ছিল না। তাঁর তো আর কিছু পাওয়ার ছিল না। তা হলে কেন এলেন? এখানে আসার আগে বোল্ট স্বীকার করেছিলেন, তাঁর স্পনসররা চেয়েছিল আর একটা টুর্নামেন্টে নামতে। যা হবে তাঁর বিদায়ী টুর্নামেন্ট। বোল্ট বলেছিলেন, ‘‘আমি একটা ইভেন্টেই ফোকাস করব। সেটা একশো মিটার। তা হলে জিততে সমস্যা হবে না।’’

দেখা গেল, বোল্ট ঠিক ভাবেননি। একশো মিটারে তাঁকে সিংহাসনচ্যুত করলেন জাস্টিন গ্যাটলিন। আর জীবনের শেষ রেসে তাঁকে থামিয়ে দিল চোট। বিদায়বেলায় ‘বিদ্যুৎ’ বোল্ট টুইট করে গেলেন, ‘আমার ভক্তদের জন্য ভালবাসা রইল।’

ভালবাসা থাকল কিংবদন্তির জন্যও। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই পৃথিবীকে আনন্দ দেওয়ার জন্য।






Shares