Main Menu

বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন : সুবিধাজনক অবস্থায় আওয়ামীলীগ, বিপাকে বিএনপি

+100%-

শামীম উন বাছির :::১৯ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবগঠিত বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।  উপজেলা নির্বাচন এগিয়ে আসায় নির্ঘুম প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। নির্বাচনী এলাকায় এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। নির্বাচন জমে ওঠায় হাট-বাজার, চায়ের দোকানসহ সর্বত্র চলছে নির্বাচনী আলোচনা। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা।  প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে নানা গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমর্থন লাভের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। ভোটাররাও তাদের বুলিতে না ভুলে প্রার্থীদের নিয়ে  চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন।

প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো উপজেলা। প্রার্থীদের পক্ষে দলের নেতাকর্মীরা লিফলেট বিতরণ করছেন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। এক কথায় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের আনা গোনায় মুখরিত উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল। নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩টি পদেই একক প্রার্থী ঘোষণা করলেও বিএনপিতে রয়েছে বিদ্র্রোহী প্রার্থী। চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি তানভীর ভূঁইয়া (দোয়াত-কলম), উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম লিটন (টেলিফোন), বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী প্রকৌশলী কাজী রফিকুল ইসলাম (কাপ-পিরিচ), উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক (চিংড়ি মাছ), নির্দলীয় প্রার্থী আবদুস সাত্তার (আনারস) ও সাংবাদিক সাহিদ সিরাজী (মোটরসাইকেল)। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক ও জেলা সাংবাদিক সমিতির আহ্বায়ক দীপক চৌধুরী বাপ্পী (মাইক), আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাবুল আখতার (বই), বিএনপি সমর্থিত মোখলেছুর রহমান লিটন (টিউবওয়েল), বিএনপির বিদ্রোহী জহিরুল ইসলাম (উড়োজাহাজ), জাতীয় পার্টির জাকারিয়া আহমেদ (টিয়া পাখি), নির্দলীয় আলী নেওয়াজ (তালা), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সজরুল হক সুজন (চশমা) ও রেদোয়ানুল বারী সিরাজী (বৈদ্যুতিক বাল্ব)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুন নাহার টুনি (হাঁস), বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মরিয়ম বেগম (কলস) ও নির্দলীয় প্রার্থী সেলিনা আক্তার (ফুটবল)।

বিজয়নগর উপজেলা নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে গ্রহণ করায় জমে উঠছে দুই দলের লড়াই। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নেই প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।  তিনি গনসংযোগে অংশ নেওয়া সহ পথসভা ও নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখছেন। তার সাথে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মোঃ হেলাল উদ্দিন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হেলাল উদ্দিন, মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, মুজিবুর রহমান বাবুলসহ জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগনও আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে গনসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

অপরদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির আহবায়ক হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সদস্য সচিব জহিরুল হক খোকন, যুগ্ম আহবায়ক জিল্লুর রহমান, অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান মঞ্জু, মোঃ সিরাজুল ইসলামসহ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
নির্বাচনে ৩টি পদেই আওয়ামীলীগ একক প্রার্থী দিতে পারায় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রচার-প্রচারণায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নেমেছেন জোরালোভাবে। প্রতিদিনই জেলা সদর থেকে নেতাকর্মীরা দল বেঁধে ছুটছেন বিজয়নগরের ১০টি ইউনিয়নে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার তিতাস পূর্বাঞ্চলের ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে উপজেলা করার দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই বিজয়নগর উপজেলার ঘোষণা দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে।ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন এই উপজেলা হয় ২০১০ সালের ২৩শে আগস্ট। এরপর প্রায় ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার উন্নতি হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এবং থানার কার্যক্রম চলছে ভাড়া বাড়িতে।

বিএনপিতে রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম লিটনকে তাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে।তবে চেয়ারম্যান পদে জেলা বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করে উপজেলা বিএনপি আলাদা প্রার্থী দিয়েছে।আগে  উপজেলা বিএনপি এবং চেয়ারম্যান মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অভিযোগ,  মাঠের অবস্থা বিবেচনা না করে তাকে প্রার্থী মনোনীত করে জেলা বিএনপি। শরিফুল ইসলাম লিটন এলাকায় পরিচিত নন বলে জানায় উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপি।১লা মে উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের সাটিরপাড়ায় প্রায় দু-সহস্রাধিক বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থক সমাবেশ করে ইঞ্জিনিয়ার কাজী রফিকুল ইসলামকে তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে।

সরেজমিন জানা গেছে, লিটনকে নিয়ে জেলা বিএনপি নেতারাই মাঠে আছেন শুধু। আর স্থানীয় বিএনপি একাট্টা কাজী রফিকুল ইসলামকে জয়ী করাতে। অবস্থা সুবিধার নয় দেখে দু-দিন আগে রফিকুল ইসলামকে জেলা বিএনপি বহিষ্কার করে। স্থানীয় বিএনপি’র এক নেতা বলেন, এটি আগুনে ঘি ঢালার মতো ব্যাপার হয়েছে। পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিঙ্গায় বিএনপি প্রার্থী লিটনের বাড়ি। এ গ্রামের মলাই মিয়া ও হারুন মিয়া বলেন, লিটন অল্প বয়স্ক। রাজনীতিতেও নতুন। এই গ্রামের অনেকে তাকে চেনে না। কাজী রফিকুল ইসলামই আমাদের পাহাড়পুর ইউনিয়নে পাস করবে। সাধারণ ভোটারদের অনেকেই  বলেছেন, ভোটে কারচুপি না হলে রফিকুল ইসলামের জয় ঠেকানো সম্ভব হবে না। মির্জাপুর গ্রামের  মো. মরম আলী, মে. মামুন মিয়া, মো. অহিদ ভূইয়া ও সারোয়ার, পাহাড়পুর ইউনিয়নের গোয়ালনগর গ্রামের বাদল মিয়া, সিংগারবিল নলঘড়িয়ার জাফর আলী, কাশীনগরের নাসির মিয়া, চান্দুরার আলী আজম মোল্লা, জালালপুরের আবু তাহের সর্দার, বুধন্তি ইউনিয়নের আবু সালেক মোল্যা, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ছতরপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, ইঞ্জিনিয়ার কাজী রফিকুল ইসলামের অবস্থাই ভাল। তার পরিচিত আছে সবার কাছে। তাছাড়া এলাকার কাজে সব সময় তাকে পাওয়া যায়।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট তানভীর ভূইয়া (দোয়াত কলম) এর সাথে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী      (বহিষ্কৃত) প্রকৌশলী কাজী রফিকুল ইসলাম (কাপ-পিরিচ) এর প্রতিদ্বদ্বিতা হবে। ভাইস চেয়ারম্যান পদ দুটোতেও আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন ।

তবে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জহিরুল হক খোকন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের প্রার্থীরাই জিতবে। নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে মাঠে লড়াই করছেন জাতীয় পার্টি। এ উপজেলায় জাতীয় পার্টির উল্লেখযোগ্য কর্মী সমর্থক রয়েছে।






Shares