Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে সোহাগই ঠিক করেছিল বাংলাদেশ-শ্রীলংকা টেস্ট ম্যাচের নাম “জয়বাংলা কাপ”

+100%-

শ্রীলংকার সাথে প্রথম বারের মতো টেস্ট ম্যাচ জয়লাভ করে বাংলাদেশ জয় বাংলা কাপ হাতছাড়া হতে দেয়নি। শততম টেস্টে ঐতিহাসিক বিজয়ের মধ্য দিয়ে সিরিজ ড্র করে জয়বংলা কাপের ওপর যৌথ অধিকার বজায় রেখেছে বাংলাদেশ।

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত দুই টেস্ট ম্যাচের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনের খেলা দেখার জন্য লন্ডন সময় ভোর সাড়ে চারটায় উঠেই শুনলাম এই টেস্ট সিরিজের নামকরণ করা হয়েছে জয়বাংলা কাপ সিরিজ, তখন চমকে উঠলাম। বাংলাদেশ হচ্ছে সফরকারী অতিথি দেশ, আর স্বাগতিক দেশ হচ্ছে শ্রীলংকা । এই সিরিজের নামকরণ জয়বাংলা হলো কিভাবে? ভাবলাম, ৭ই মার্চ ভোরে উঠে খেলা দেখছি, ঘুমের ঘোরে হয়তো ভুল শুনছি। না, ধারাভাষ্যকাররা ঘুরে ফিরেই বলছেন জয়বাংলা কাপের কথা। বাংলাদেশ দলের সাবেক তুখোড় ব্যাটসম্যান ধারাভাষ্যকার আতাহার আলী খান তো ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ দেয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই অগ্নিঝড়া ভাষণের উল্লেখ করেই মুক্তিযুদ্ধে জয়বাংলা শ্লোগানের তাৎপর্য তুলে ধরছিলেন।

উত্তেজনাপূর্ণ দুটি টেস্ট ম্যাচের খেলা দেখা এবং খেলার রিপোর্ট লেখার চাপে টেস্ট সিরিজের নামকরণ নিয়ে খোঁজ-খবর নেয়ার ফুরসত হয়নি। প্রথম টেস্টে হেরে গিয়েও আমাদের সোনার ছেলেরা এই স্বধীনতার মাসে প্রথমবারের মতো শ্রীলংকাকে হারিয়ে জয়বাংলা কাপের ওপর যৌথ অধিকার বজায় রাখতে পারায় দেশ বিদেশের লক্ষ কোটি সমর্থকদের মতো আমিও আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে পড়ি। খেলাশেষে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে আমাদের টেস্টদলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম যখন লংকান অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথকে নিয়ে জয়বাংলা কাপ গ্রহণ করলো তখন আনন্দের শেষ নেই। এই আনন্দের রেষ চলবে আরও অনেক দিন।

কিন্তু জয়বাংলা কাপ নামকরণ হলো কিভাবে? কলম্বোতে বাংলাদেশ দলের এই সফর কভার করার জন্য অনেক ক্রীড়া সাংবাদিক ও ফটো সাবাদিকের সাথে রয়েছে অনুজ প্রতীম মীর ফরিদ। যোগাযোগ করলাম ফরিদের সাথে। ওর সাথে কথা বলে জয়বাংলা কাপ নামকরণের উদ্যোক্তা নেওয়াজ সোহাগের সন্ধান পেলাম। সোহাগের পেশাই হচ্ছে স্পোর্টস ইভেন্ট মার্কেটিং করা। এড টাচ স্পোর্টস এ্যান্ড লাইভ ইভেন্ট নামকব্যবসা প্রতষ্ঠিানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে, টেন স্পোর্টস শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ডের কাছে থেকে সাত বছরের জন্য প্রচার স্বত্ত কিনে নিয়েছে। এড টাচ স্পোর্ট এ্যান্ড লাইভ ইভেন্ট অপর একটি ভারতীয় কোম্পানির সাথে মিলে টেন স্পোর্টস এর কাছ থেকে বাংলাদেশের চলতি সিরেজের প্রচার স্বত্ব কিনে নিয়েছে।

‘‘ যখন দেখলাম যে, টেস্ট সিরিজটি শুরু হবে ৭ই মার্চ, তখন শ্রীলংকা ক্রিকেট বের্ডের কাছে দুই ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজটির নাম জয়বাংলা কাপ সিরিজ পাওয়ার্ড বাই হিরো রাখার প্রস্তাব দিলাম। শ্রীলংকান ক্রিকেট বোর্ডের কাছে ৭ই মার্চের ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরার পর তারা জয়বাংলা কাপ নামকরণ করতে সম্মত হলো।”
আবেগ আপ্লুত হয়ে সোহাগ বল্লেন, ”আমার জন্ম হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে। ৭ই মার্চ দেখিনি, মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তবে বই-পত্র পড়ে আর বয়োজ্যাষ্ঠদের কাছ থেকে জেনেছি স্বাধীনতার হতিহাস, শুনেছি ৭ই মার্চের ভাষণের কথা।”
সোহাগ আরও বল্লেন, ”আমি খুবই নগন্য মানুষ । তাই দেশের জন্য এটুকু করতে পেরে ভালো লাগছে, ভালো লাগছে বিদেশের মাটিতে মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান জয়াংলা প্রচার করতে পেরে। তবে আরও ভালো লগতো আমি যদি এই জয়বাংলা সিরিজটা পাকিস্তানের মাটিতে করতে পারতাম।”

উল্লেখ্য, জয়বাংলা শ্লোগানই ছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের মানসিক শক্তির অন্যতম উৎস। দেশমাতৃকাকে হানাদারদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য হাসিমুখে এই জয়বাংলা শ্লোগান দিয়েই হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন।






Shares