Main Menu

ফিরতে চাচ্ছেন ভারতে চলে যাওয়া ছিটমহলের বাসিন্দারা:: উদ্বিগ্ন ভারতীয় প্রশাসন

+100%-

bbbbbbভারতীয় হয়েও স্বাধীনতার পরে ৬৯ বছর নাগরিকত্ব ছিল না এঁদের। নভেম্বরে ভারত ও বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর নাগরিকত্বের খোঁজে  এঁরা চলে এসেছিলেন মূল ভূখণ্ডে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, কয়েক মাসেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে বাংলাদেশে ফিরতে চাইছেন অনেকে।

এমন খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে বিদেশ মন্ত্রক। কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল, তা জানতে চেয়ে এ বার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধিকর্তা। কোচবিহারের জেলাশাসককে ঘটনার তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

নবান্নে পাঠানো সেই বার্তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তা যা লিখেছেন, তা দেখে নড়ে বসেছে প্রশাসনের শীর্ষ মহল। সূত্রের খবর, স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মে মাসে রাজশাহিতে কর্তব্যরত ভারতের অ্যাসিসট্যান্ট হাই-কমিশনার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে যান। এই জেলায় যুক্ত হওয়া ভারতীয় ছিটমহলগুলিতে গিয়ে তিনি শোনেন, জমি-জমা বেচে ভারতে চলে যাওয়া অনেকেই আবার ফিরে আসতে চাইছেন। তেমনটা হলে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এর পর বিদেশ মন্ত্রকে একটি রিপোর্ট পাঠান তিনি। তাতে বলা হয়, ‘যে সব ভারতীয় নিজের ভূখণ্ডে গিয়েছিলেন, নানা কারণে তাঁরা এখন বাংলাদেশে ফিরতে চাইছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়। সরকার বিষয়টি দেখুক।’ বিদেশ মন্ত্রক রিপোর্টটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠিয়ে বিস্তারিত জানতে চায়। তার পরেই মন্ত্রকের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অধিকর্তা বিষয়টি নবান্নের কাছে বিশদে জানতে চেয়েছেন। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘জেলাশাসকের রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। দিল্লিকে পরিস্থিতি জানানো হবে।’’

ভারতীয় ছিটমহলগুলি বাংলাদেশে মিশে যাওয়ার পর এ পারে এসেছিলেন ৯২১ জন। তাঁদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জন্মও হয়েছে ৪ জনের। দিনহাটায় ৫৬টি, মেখলিগঞ্জে ৫৪টি এবং হলদিবাড়িতে রয়েছে ৯৬টি পরিবার। সাবেক ছিটের বাসিন্দাদের রাখার জন্য ১০ কোটি টাকা খরচ করে দিনহাটার কৃষিমেলা বাজার, মেখলিগঞ্জের কৃষি ফার্ম এবং হলদিবাড়িতে তিনটি ক্যাম্প তৈরি করেছে প্রশাসন। কিন্তু সব গুলিরই খুব করুণ অবস্থা। ছোট টিনের ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে মানুষকে।

হলদিবাড়ি ক্যাম্পের বাসিন্দা শরৎ রায় বলেন,‘‘আমার এক ভাই-সহ দুই আত্মীয় চোরাপথে বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছেন।’’ তিনি জানান, তাঁর ভাই অরুণ ও পারে মিষ্টির দোকানের কারিগর ছিলেন। হাজার দশেক টাকা আয় ছিল। এখানে রুজি না-মেলায় বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন। কাজের সুযোগ না-পেয়ে বাকিরাও গিয়েছেন। ক্যাম্পের আর এক বাসিন্দা গণেশ রায় বলেন, “বছর ঘুরতে চললেও কিছুই হল না। অনেকেই চলে যেতে চাইছে।”

মেখলিগঞ্জ ক্যাম্পের বাসিন্দা শরৎচন্দ্র বর্মন জানান, ও পারে তাঁর দর্জির দোকানে পাঁচ জন কর্মী খাটত। পাঁচ বিঘের ওপরে জমি ছিল।

খাওয়া-পরার কষ্ট ছিল না। এখন তিনি দিনমজুর। তাঁর আক্ষেপ, “সাত জনের সংসার। এখানে কোথাও দোকান দেওয়ার জায়গা নেই। তাই দিনমজুরি করতে হয়। সরকার না-দেখলে নিরুপায় হয়ে ভিন্ন পথেই

ফিরতে হবে।” বাসিন্দাদের অভিযোগের সঙ্গে সহমত নাগরিক অধিকার সমন্বয় কমিটির কর্তা দীপ্তিমান সেনগুপ্তও। তিনি বলেন, “ত্রাণ শিবিরে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের আর্থিক সমীক্ষা জরুরি ছিল। সে সব কিছুই হয়নি।’’

তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ মানতে নারাজ প্রশাসন। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘১০ কোটি টাকা এসে গিয়েছে। আসছে আরও ৫০ কোটি। ফলে পুনর্বাসন নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ ঠিক নয়।’’ কোচবিহারে জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থাও নিচ্ছি। অনেক সময়ই অভিযোগের কোনও ভিত্তি থাকে না। যাতে কেউ বাংলাদেশে ফিরে না-যায় তা দেখব।’’






Shares