Main Menu

বিজয়নগরে মন্ত্রী-আ’লীগ মুখোমুখী, রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, মন্ত্রী আসবেনই, বিজিবি-র‌্যাব-পুলিশ মোতায়েন

+100%-

নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে ব্রাহ্মনবাড়িয়ায়। মন্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামীলীগ মুখোমুখী। প্রানী সম্পদ মন্ত্রী জেলার বিজয়নগরে এক অনুষ্ঠান নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিজয়নগর আওয়ামীলীগ ডেকেছে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। মন্ত্রীর আগমন ঠেকাতে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অন্তত ২০ হাজার মানুষ মন্ত্রীর আগমন ঠেকাতে রাজপথে অবস্থান নেবে বলে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান।

অন্যদিকে সরকারী অনুষ্ঠান যে কোন মূল্যে করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে মন্ত্রীর অনুগতরা। এদিকে মন্ত্রীর সফরের ২ দিন আগে বিজয়নগরে প্রানী সম্পদ কর্মকর্তার উপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তারা ওই কর্মকর্তার মোবাইল কেড়ে নিয়ে যায়। অফিস কক্ষ তছনছ করে। পরে অফিস থেকে মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রীর উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের নাম ফলক ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে গোটা এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার অফিস সূত্র জানায়, শুক্রবার দুপুরে এক থেকে দেড়শ লোকের একটি গ্রুপ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে জোর পূর্বক অফিসে ডুকে পড়ে। তারা প্রাণী সম্পদ অফিসে প্রবেশ করে অশ্রাব্য ভাষায় কর্মকর্তাকে গালি গালাজ করে ও শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করে। এক পর্যায়ে মাথায় আঘাত করে। তখন জানতে চান মন্ত্রীর নাম ফলক কোথায় ? সে সময় অফিসে জিনিস পত্র তছনছ করে। ফুলের টব ভাংচুর করে গুড়িয়ে দেয়। কর্মকর্তার কাছে রক্ষিত মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এক ঘন্টা পর মোবাইলটি উদ্ধার করে তাকে ফেরত দেয়। ঘটনার পর প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডঃ লুৎফুর রহমান অফিস থেকে চলে যান। তিনি তার উপর হামলার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে থানায় মামলা হবে।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আরশাদ জানান, কয়েকটা ফুলের টব তারা ভেঙ্গে ফেলেছে। মন্ত্রীর মহোদয়ের উদ্ধোধনের ফলকটিও তারা ভেঙ্গে ফেলেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তিনি জানান, এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ দিকে বিজয়নগরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আল মামুন সরকার, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এডঃ তানভীর ভূঁইয়াসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, হরতালের দিন পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সকলকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে মৎস্য মন্ত্রী ছায়েদুল হক নির্ধারিত অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে দলীয় একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন, দলের স্বার্থে সেখানে যাবেন।

এদিকে জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান বলেছেন, আইন শৃংখলা রক্ষায় সব কিছুই করা হবে। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান পিপিএম জানিয়েছেন, হরতালের দিন আইন শৃংখলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন। তিনি জানান, ২ প্লাটুন বিজিবি, ৫ সেকশন র‌্যাব, এপিবিএন সদস্যসহ বাড়তি দেড়শত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।

মন্ত্রী ছায়েদুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে নব-নিমির্তি পশু সম্পদ কার্যালয় (ইউএলডিসি) ভবন উদ্বোধন করবেন রবিবার সকাল ১০টায়। তার আগমন ঠেকাতে রবিবার উপজেলা আওয়ামীলীগ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচী ঘোষনা করে। এরআগে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক সম্মেলণ করে মন্ত্রীর অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষনা দেয়। বৃহস্পতিবার রাতে ব্র্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত সুধী সমাবেশের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বিজয়নগরে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

হরতালের প্রসঙ্গ টেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, উনার (মোকতাদির চৌধুরী) বোঝা উচিত আমি পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কোনো কাজ করছি না, মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য বিল্ডিং (প্রাণি সম্পদ হাসপাতাল) উদ্বোধন করব।

এদিক স্থানীয়রা বলছেন, নাসিরনগরের ধাক্কা আবার লেগেছে। গত বছরের ৩০ আক্টোবর পবিত্র কাবা শরীফের ছবি বিকৃত করে ফেইস বুকে ছেড়ে দেয়ার পর হিন্দু বাড়ি-ঘর ও ১৫ মন্দির ভাংচুর ঘটনা আবার সামনে চলে এসেছে। নাসিরনগরে মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রী সে ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্য সুধী সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন, নাসিরনগরকে বিশ্বসংবাদে পরিণত করার নায়ক মোকতাদির চৌধুরী। হিন্দু পল্লীতে হামলার দায় মোকতাদির চৌধুরীকেই নিতে হবে।

এরপর বিজয়নগর উপজেলায় আগামী রোববার মন্ত্রীর (মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়) অধিনস্ত নব-নির্মিত কার্যালয় ভবন উদ্বোধনের কর্মসূচীতে স্থানীয় সাংসদ র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে না রাখায় নতুন করে মন্ত্রী ও জেলা-উপজেলা আওয়ামলীগের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়।






Shares