Main Menu

সরকারি চাল সংগ্রহে চলছে কমিশন বাণিজ্য

+100%-

brahmanbaria-picture_2প্রতিনিধি::ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামে সরকারি চাল সংগ্রহের নামে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নতুন আমন মৌসুমে শুরু হওয়া চাল সংগ্রহ অভিযানে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ এবারও প্রতি কেজি চালে ৮০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত কমিশন আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মিল চুক্তি ও মিল লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য প্রতি মিল থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা উৎকোচ ও ভুয়া মিলের নামে বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। দেশের একটি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে তদন্ত করে। ১০/১৫ মিল বাজেয়াপ্ত করা ও ভাল চাল সংগ্রহ, কমিশন বন্ধ এবং দোষী মিল মালিক ও অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে। দুই কর্মকর্তা বদলী হলেও এখনো মিল মালিক কিংবা মিলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি খাদ্য মন্ত্রণালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে চলতি আমন চাল সংগ্রহ অভিযানে সিদ্ধ চাল ৫ হাজার ৫০৩ মেট্রিক টন ও আতব চাল ১২ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করবে সরকার। জেলার মোট বরাদ্দের ৪ ভাগের ৩ ভাগই নেওয়া হয় আশুগঞ্জ থেকে। এর মধ্যে আশুগঞ্জে স্থানীয় বিভিন্ন চাতাল কল থেকে ৩ হাজার ৯০১ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও ১১ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন আতব চাল সংগ্রহ করার কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, চলতি বছর সরকারিভাবে সিদ্ধ চালের দাম প্রতি কেজি ৩৩ টাকা ও আতব চাল প্রতি কেজি ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরকারি মুল্য অনুযায়ী সিদ্ধ চাল ৩৩ টাকা হলেও আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ স্থানীয় মিল মালিকদের সাথে সখ্যতা করে নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৮ থেকে ৩০ টাকা মূল্যের চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে ৩৩ টাকার দরে। এর ফলে দেদারসে চলছে চাল দেয়ার নামে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের কমিশন বাণিজ্য। আর এ কমিশনের টাকা সংগ্রহ করছেন মিল মালিকরা। এর ফলে প্রতি বছর কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য চলে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামে। কমিশনের এ টাকার ভাগ যাচ্ছে উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও মন্ত্রণালয় পর্যন্ত।

অভিযোগ রয়েছে, একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাল সংগ্রহ অভিযান চালায় আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম। এ সিন্ডিকেটে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতক দলের শীর্ষ নেতাদের নামও রয়েছে। তবে ভয়ের কারণে এসব সিন্ডিকেটের ব্যাপারে মুখ খুলার সাহস পান না কেউই। বিষয়টি নিয়ে দেশের একটি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে অভিযোগের পাওয়ায় ১০-১৫টি মিলের লাইসেন্স বাতিল সহ ভাল চাল সংগ্রহ, কমিশন বাণিজ্য বন্ধ এবং দোষী মিল মালিক ও খাদ্য গুদামের অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রেহণের জন্য সুপারিশ করে। গোয়েন্দা সংস্থার সুপারিশের জের ধরে আশুগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আবদুস সালাম ও খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন পাটোয়রিকে অন্যত্র বদলী করা হলেও অভিযুক্ত মিল মালিক কিংবা মিলগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি খাদ্য মন্ত্রণালয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, প্রতি কেজি চাল সরবরাহ করতে ৮০ পয়সা করে কমিশন দিতে হয় চাল সরবরাহকারীদের। আর সেই কমিশন সংগ্রহ করছেন আশুগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু কাউছার, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেনসহ চাতাল কল মালিক সমিতির কয়েকজন শীর্ষ নেতা ।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন মিল মালিক জানান, খাদ্য গুদাম আমাদের যেভাবে চালায় আমাদেরকে সেভাবেই চলতে হয়। কমিশন বাণিজ্য নিয়ে লিখলে কোন কাজ হবে না এই টাকার ভাগ সবাই পায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চাতাল কল মালিক সমিতির সভাপতি মো. জিয়াউল করিম খান সাজু বলেন, কমিশন নেয়া হচ্ছে না। তবে এবার চালের দাম বাজারে বেশি হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। চাল সংগ্রহ নিয়ে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন বলেন কমিশন বাণিজ্য কিংবা নিম্নমানের চাল সংগ্রহণের অভিযোগটি সত্য নয়।
আর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু কাউছার জানান, এবছর আমরা কোন কমিশন নিচ্ছি না। অতীতে কমিশন নেওয়া হয়েছে এবং তা বিভিন্ন দপ্তরে ভাগ করা হয়েছে। চাল সরবরাহকারীরা এই কমিশন দিত। তবে এ বছর চালের মান বজায় রেখেই আমরা মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল নিচ্ছি। তাই কমিশন নেয়ার কোন সুযোগ নাই।
কমিশন বাণিজ্য ও নিম্নমানের চাল সংগ্রহের অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, নিম্নমানের চাল সংগ্রহ ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য গত বোর মৌসুমে সিদ্ধ আর আতব চাল মিলে ১৫ হাজার ৮০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতি কেজিতে ৮০ পয়সা করে কয়েক কোটি টাকার কমিশন আদায় করে তারা। আর আশুগঞ্জে ৫টি ভুয়া মিলে ছিল অস্তিত্ব পেয়ে ছিল জেলা খাদ্য কমিটি। তারপরও ব্যবস্থা নেয়নি খাদ্য মন্ত্রণালয়।






Shares