Main Menu

নাসিরনগরের চিকিৎসাসেবা প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে ব্যাহত ॥ বিরাজ করছে নানা সমস্যা

+100%-
প্রতিনিধি : বর্তমান সরকার চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁেছ দেয়ার জোর প্রচেষ্ঠা চালালেও প্রয়োজনীয় লোকবল ও ওষুধপত্রের অভাবে খুড়িঁয়ে খুড়িঁয়ে চলছে সরকারের ঘোষিত দূর্গম উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা।  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার নাগরিকরা আধুনিক চিকিৎসার সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছ্।ে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক ও সীমিত জনবল দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। চাহিদা মত নার্স ও ডিএসএফ  সুবিধা  না থাকায় ওটি চালু করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে স্বাস্থ্য সেবার মান ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সাড়ে তিন লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত নাসিরনগর জনপদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্য্রসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে ১টি পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র রয়েছে । এসব কেন্দ্রে চিকিৎসক,কর্মচারি ,ওষুধ ও যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, বিদুৎ,পানি ,স্যানিটেশন সমস্যা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, জরার্জীণ অবকাঠামো, চিকিৎসক ও কর্মচারিদের আবাসিক সংকট, ব্লাড ব্যাংক না থাকাসহ নানাবিধ সংকটে উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে সরকার ঘোষিত সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা এ উপজেলায় অধরাই বলা চলে। উপজেলার প্রায় সাড়ে তিনলক্ষাধিক মানুষের জন্য জন্য একমাত্র এ হাসপাতালটি ২০০৪ সালে ৩১ শয্যা থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্য্রটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাস্তবে সেবাদানের ক্ষেত্রে কোন প্রকার উন্নতি ঘটেনি। এখানে অপারেশন থিয়েটার স্থাপন করা হলেও আজ পযর্ন্ত কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়নি।  এ কারনে অপারেশন থিয়েটারে স্থাপিত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অযত� অব্যবহ্নত অবস্থায় পড়ে থাকায় যন্ত্রপাতি গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  আর এখানে দূর্গম ৬টি ইউনিয়নসহ দুর-দুরান্ত থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে অসহনীয় দূভোর্গের শিকার হচ্ছে রোগীরা । এখানে এসে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না পেয়ে চিকিৎসার জন্য জেলা সদরের হাসপাতালে যান। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের সিজারিয়ান(সিজার) করা জরুরি হয়ে পড়লেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় তাদের কষ্টের সীমা থাকে না। একাুিধক সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ডাক্তারের পরির্বতে চিকিৎসা দিচ্ছে হাসপাতালের পিয়ন আর ওয়ার্ড বয়রা। ডাক্তার থাকলেও ব্যান্ডেজ ,সেলাইসহ বিভিন্ন অস্ত্রোপাচার পিয়ন,ওয়ার্ড বয় ওঝাড়�দাররা করে থাকেন। ফলে সব সময় রোগীরা মুত’্যর ঝুঁিকর আশংকায় থাকেন। বর্তমানে উপজেলা কমপ্লেক্য্রে  ২১ জন ডাক্তারের স্থলে রয়েছে মাত্র ৭ জন ডাক্তার। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) ,জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি) এ দুইজন ডেপুটেশনে রয়েছে। প্যাথলজিষ্ট, রেডিওলজিষ্ট,  জুনিয়র কনসালটেন্ট(এ্যানেসথেসিয়া) জুনিয়র কনসালটেন্ট (স্যার্জিকেল) জুনিয়র কনসালটেন্ট ( গাইনি এন্ড অবস) জুনিয়র কনসালটেন্ট( ডেন্টাল), জুনিয়র কনসালটেন্ট( নাক কান গলা) , জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট( চর্ম ও যৌন)সহ অনেক চিকিৎসকের পদ র্দীঘদিন ধরে শূণ্য পড়ে রয়েছে। তাছাড়া যে কয়জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছে তাদের মধ্যে কতিপয় ডাক্তার বিএমএর নাম ভাঙ্গিয়ে প্রায়ই হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ১৪ জন নার্সের স্থলে মাত্র ২ জন কর্মরত রয়েছে । এরমধ্যে কতিপয় নার্সের বিরুদ্ধে ভর্তিকৃত রোগিদেরকে ইনজেকশন পুশের নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।   ৫০ শয্যা হাসপাতাল হিসেবে খাদ্য বরাদ্ধ পাওয়া গেলেও চাহিদা মোতাবেক ঔষধপত্র সহ চিকিৎসক, নার্স ও জনবল পোষ্টিং দেয়া হয়নি। অথচ এ হাসপাতালে প্রায় সময় ইনডোরে ৬০/৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে এবং আউটডোরে ৩/৪শ রোগী  চিকিৎসা দিতে আসে। বিশেষ করে গাইনি কোন ডাক্তার না থাকায় মহিলা রোগীদের চরম দূভোর্গ পোহাতে হচ্ছে । হাসপাতালে ব্লাড ব্যংক নেই। এখানে ৭ বছর ধরে এক্স-রে মেশিন নেই। সম্প্রতি নতুন এক্স-রে মেশিন আসলেও প্রতিস্থাপন ও মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (রেডিওগ্রাফি) অভাবে তা চালু করা যাচ্ছে না। হাসপাতালে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও প্রয়োজনীয় জনবল , নাসর্, এ্যানেসথেসিয়ার ও সার্জারি ডাক্তার না থাকায় সিজার সহ অন্যান্য অপারেশন বন্ধ রয়েছে । তাছাড়া বছরের পর বছর অব্যবহ্নত ও তালা বন্ধ থাকায় প্রায় কোটি টাকা মূল্যের এসব চিকিৎসার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । এখানে দাঁতের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সামগ্রী, আলটাসনোগ্রাম মেশিন সহ আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। এ হাসপাতালে জেনারেটর থাকলেও জ্বালানি তৈলের প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ না থাকায় তাও বন্ধ রয়েছে । ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে হারিকেন ও মোমবাতির আলোয় রোগীদের থাকতে হয়। নামে ৫০ শয্যা হলেও শয্যা আছে মাত্র ৩৫টি। শয্যা সংখ্যা কম হওয়ায় প্রায়ই রোগীদেরকে মেঝেতে বা বারান্দায় থাকতে হয়। ভর্তিকৃত প্রায় সব রোগীকেই প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বাইরে থেকে কিনতে হয়। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ১টি পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ফান্দাউক ও পূর্বভাগ উপস্বাস্থ্য  কেন্দ্রে ১ জন করে ডাক্তার রয়েছে।  ফলে গ্রামের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ বাড়ীর কাছে চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাবিজ আর ঝাড়ফুঁক-ই  তাদের একমাত্র চিকিৎসা। আবার কেউ কেউ হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন।    এছাড়া স্বাস্থ্য পরিদর্শকসহ ৩য় শ্রেনীর বিভিন্ন ১১৭টি পদের মধ্যে ৩৭টি পদ ও ৪র্থ শ্রেনীর এমএলএসএস, মালি, নিরাপত্তা প্রহরীসহ ৩৬টির স্থলে ১৪টি পদ শূন্য রয়েছে । একমাত্র গুনিয়াউক পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবস্থা জরাজীর্ণ। ২ জন ডাক্তারের পদের একজন ডাক্তারও তিনি নিয়মিত কর্মস্থলে থাকেন নেই। ৪ জন সেবিকার পদ থাকলেও একজন সেবিকাও নেই। এছাড়া এমএলএসএস, মালি, নিরাপত্তা প্রহরীর পদ শূন্য রয়েছে।  দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় মূল ভবনসহ আবাসিক ভবনের বিভিন্ন স্থান থেকে আস্তর খসে পড়ছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ জিয়াউল ইসলাম সেলিম জানান, রোগীদের তুলনায় লোকবল সংকট থাকায় জরুরি বিভাগে মাঝে মধ্যে ওয়ার্ড বয়দের দিয়ে টুকিটাকি কাজ করানো হয়। এছাড়া উপায় নেই।  
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবু ছালেহ মোঃ মুসা খান জানান, চিকিৎসক , নার্স ও জনবল সংকট থাকায় স্বল্পসংখ্যক ডাক্তার ও সেবিকা দিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ থাকলেও কেবল মাত্র ডাক্তার ও নার্সের অভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিমাসেই চিকিৎসক , নার্স ও জনবল সংকটসহ   বিভিন্ন সমস্যার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হলেও এর কোন সমাধান হচ্ছে না। এখানে ডাক্তার ও সেবিকাদের পোষ্টিং দেয়া হলেও তদবির করে তারা অন্যত্র চলে যায়।





Shares