Main Menu

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন, তবু পাচ্ছেনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি, তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন

+100%-

মুরাদ মৃধা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় বাদ পড়া ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজনরা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। গত রোববার দুপুরে নাসিরনগর শহীদ মিনারের সামনে বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাগণ ও তাদের সন্তানদের উদ্যোগে আয়োজিত এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। স্বজনদের অভিযোগ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার পর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত করেনি নাসিরনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি।

এদিকে বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের অভিযোগ কিছু স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অসহযোগিতা,দুর্ব্যবহার এবং তাদের অভ্যন্তরীণ দন্ধের কারণে যাচাই-বাছাই কমিটি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফী জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গেজেট, লাল মুক্তিবার্তার নাম্বার ও ভারতীয় তালিকাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, সাক্ষ্য প্রমানের উপর ভিত্তি করে যাচাই-বাছাই করেন কমিটি। যাচাই-বাছাই শেষে ১৭জনের কাউকেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনাক্ত করতে পারেননি কমিটির সদস্যরা।

উপজেলা সদরের ফুলপুর গ্রামের বাসিন্দা মীর হারুনুর রশিদ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি এফএফ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। মানববন্ধনে মীর হারুনুর রশিদের ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের স্নাতকোত্তরের ছাত্র জিয়াউল হাসান জানান, তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের পঁটিয়া থানায় ভারতীয় ক্যাপ্টিন পি কে মালিকের উপস্থিতি ১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর অস্ত্র জমা দেন। আতাউল গণি উসমানী স্বাক্ষরিত দেশ রক্ষা বিভাগ স্বাধীনতা সংগ্রামের তাঁর বাবার একটি সনদপত্র আছে। তার বাবা তিন নম্বর সেক্টরে অভিযানে স্বল্প সময় দিয়েছিল। আর এক নম্বর সেক্টরে বেশি সময় দিয়েছেন। যুদ্ধকালীন সময়ের ব্যক্তিদের নামগুলোও কমিটির সামনে উত্থাপন করেছি। আমার বাবার সকল সনদ ছিল। কিন্তু গত বছর যাতায়াতকালে এসব সনদ হারিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে চাঁদগাও থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আমার বাবা যুদ্ধের পর পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামের চাঁদগাও থানার খাজারোড বাদামতলা এলাকায় চলে যায়। তিনি ২০১৮ সালের ৯ মে মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর চট্টগ্রামে তাকে রাষ্ট্রীয় মার্যাদা দেওয়া হয়। সেসময় চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, ডেপুটি কমান্ডার মো. শরীফ, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নওশের ইবনে আলীম, চাঁদগাও থানার ওসিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে নাসিরনগরের ফুলপুরে দাফন করা হয়। তিনি আরো জানান, ২০১৭ সালে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির প্রতিবেদনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ সোহরাব মোল্লা, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রতিনিধি সদস্য মিজবাহ উদ্দিন আহমেদ, মুবিম’র প্রতিনিধি সদস্য আব্দুল বাকী ও জামুকার প্রতিনিধি সদস্য কালন চৌধুরী তার বাবার তালিকা ভুক্তির আবেদনে নামসহ স্বাক্ষর করেন। কিন্তু কোন যুক্তিতে কমিটি আমার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা বলেছে না বুঝতে পারছি না।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও সাবেক উপ-সচিব মিছবাহ উদ্দিন আহমেদের সাথে বার বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় এবং মোবাইলে মেসেজ দিলেও তিনি ফোনে কথা বলেননি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা ও মানেননি নাসিরনগর উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটি। এমনই অভিযোগ একজন আবেদনকারী চানু চন্দ্র দেবের। তিনি বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি জানান, আমি মুক্তিযোদ্ধের সময় ত্রিপুরার কুঞ্জবন শরণার্থী স্কুলে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেছি। গর্ভানমেন্ট অব ত্রিপুরা হেল্থ অর্গানাইজেশন তেলিয়া মুরা কর্তৃক সনদপত্র ও বাংলাদেশর আব্দুল হক সিরাজি ‘প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ হেলথ অর্গানাইজেশন’ কর্তৃক স্বাক্ষরীত সনদ থাকার পরও নাসিরনগর উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটি যাচাই বাছাইয়ের সময় আমায় ডাকেনি। অথচ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের সংজ্ঞার ২ নং শর্তে লেখা আছে ‘যে সকল পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং বিশ্বে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন’ তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা। চানু দেব আরো জানান, আমি যে স্কুলে শিক্ষকতা করেছি সে স্কুলে ১১ জন বাংলাদেশি শিক্ষকতা করত। তাদের সবাই মুক্তিযোদ্ধা না হওয়ার আক্ষেপ নিয়ে মারা গেছেন।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাতমন্ডল গ্রামের আব্দুল কবির (৭০) বলেন, মুক্তিবার্তায় দুই বারই আমার নাম উঠেছে। মুক্তিবার্তার তালিকায় আমার আগে থাকা বাচ্চু মিয়া ও পরের থাকা জাহের মিয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি বলেন, আগরতলা ক্যাম্পে ট্রেনিং নিয়েছি। তিন নম্বর সেক্টরের অধীনে তেলিয়াপাড়া, তৎকালীন মাধবপুরের হরষপুর ও মুকুন্দপুরে যুদ্ধ করেছি। ডান পায়ে ও ডান হাতে গুলিদ্ধি হয়েছি। তার পর যাচাই বাছাই কমিটি আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করেনি।






Shares