Main Menu

বিনিময় প্রথা টিকিয়ে রাখতে নাসিরনগরে শুঁটকি মেলা

+100%-

মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর সংবাদদাতাঃ পৃথিবীতে মুদ্রার প্রচলন হওয়ার আগে যেভাবে পণ্যের বিনিময়ে পণ্য কেনার প্রথা চালু হয়েছিল যেন এরই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে নাসিরনগরের শুঁটকি মেলা। ব্যতিক্রমধর্মী এই মেলা শুরু হয় দিনের আলো ফোটার আগেই। শেষ হয় সন্ধ্যায়,সূর্য ডোবার সাথে-সাথেই। শুঁটকি ছাড়াও এই মেলার প্রধান আকর্শন ‘পণ্যের বিনিময়ে পণ্য’ অর্থাৎ ‘বিনিময় প্রথা’। মঙ্গলবার ভোরে বসার পর একটানা চলে সকাল দশটা পর্যন্ত বিনিময়ের মাধ্যমে শুঁটকি বিক্রি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা দেখা যায়,কেউ ধান দিয়ে শুঁটকি কিনছে,কেউ চাল দিয়ে। কেউ আবার আলু দিয়ে শুঁটকি কিনছে। অনেকেই আবার ডাল কিংবা সরিষা দিয়েও শুঁটকি কিনছে। অর্থাৎ ভোর থেকেই এখানে চলছে পণ্য দিয়ে পণ্য বেঁচা-কেনা। জেলার নাসিরনগরের কুলিকুন্ডা গ্রামের শুঁটকি মেলায় গিয়ে ওই দৃশ্য দেখা যায়। তবে, ওই দৃশ্য একবারেই নতুন নয় বরং প্রায় চারশত বছরের পুরনো। স্থানীয়ভাবে এই মেলার নাম ‘বৈশাখী শুঁটকি মেলা’। বসে প্রতিবছরে বৈশাখের দ্বিতীয় দিন। গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষই মূলত এই মেলার ক্রেতা-বিক্রেতা। এ মেলা গৃহস্থালি সামগ্রীসহ শিশুদের নানা ধরনের খেলনা বিক্রি হয়।
২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর হিন্দুপল্লীতে হামলার পর এ মেলার ঐতিহ্য অনেকটাই কমে গেছে। আগের মত লোক আসেনা। কারণ এ মেলায় স্থানীয় হিন্দু জনগোষ্ঠীর দাস সম্প্রদায়ের লোকজনই নিজেদের উৎপাদিত শুঁটকি বিক্রি করেন। শুঁটকি বিক্রেতা মোহল লাল বলেন, এ বছর মেলায় উপজেলা প্রশাসন হতে কোন ধরনের নিরাপত্তা নেই। তবে কুলিকুন্ডা গ্রামের স্থানীয়রা বলছেন মেলার নিরাপত্তা যাতে বিঘœ না হয় আমরা সর্বদা মনিটরিং করছি।
গতকাল সরেজমিনে মেলায় গিয়ে দেখা যায়-মেলায় নানা জাতের শুঁটকির পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শুঁটকি ব্যবসায়িরা। মেলায় নাসিরনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ব্যবসায়িরা ছাড়াও সিলেট,হবিগঞ্জ,আশুগঞ্জ,সুনামগঞ্জ,ভৈরবসহ অন্যান্য স্থান থেকে এসেছেন ব্যবসায়িরা। তারা বলেন এবছর কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হবে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভোজন রসিকরাও পছন্দের শুঁটকি কিনতে ছুটছেন মেলার একপ্রাস্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। মেলায় বোয়াল,শোল,গজার,বাইম,শিং,কৈ,পুঁটি,টেংরাসহ বিভিন্ন জাতের দেশিয় শুঁটকি পাওয়া যায়। এছাড়াও মেলায় বিভিন্ন জাতের সামদ্রিক মাছের শুঁটকিসহ ইলিশ মাছের ডিমও পাওয়া যায়।
এ গ্রামের মুরুব্বি মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব মোল্লা বলেন, এ মেলার ইতিহাস প্রায় চারশত বছরের। আমাদের পূর্বপুরুষরা এ মেলা নিয়ে অনেক কল্প-কাহিনি বলে গেছে। সঠিক ইতিহাস কেউ বলতে পারবেনা। তবে আমাদের ধারণা এ মেলা নূন্যতম চারশত বছরের পুরুনো।
মেলায় কথা হয় নাসিরনগর সরকারি কলেজে শিক্ষক জামিল ফোরকানের সাথে, তিনি বলেন আমি মেলা থেকে শুঁটকি কিনে আমার নিজ জেলা কুষ্টিয়া পাঠাব। এ মেলায় দেশিয় সকল জাতের শুঁটকি পাওয়া যায়।
আশুগঞ্জ হতে আসা লোকমান ও আল মামুনের সাথে কথা হলে তারা জানান, কুলিকুন্ডা গ্রামের শুঁটকি মেলার কথা লোক মুখে শুনেছি। আজ সরেজমিন দেখলা। তবে মেলায় শুঁটি অনেক দাম।
শতবছরের ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মেলা ইজারা মুক্ত হলেও স্থানীয় দালালদের টাকা দিয়ে দোকানের পজিশন নিতে হয়। এমন অভিযোগ করে সিলেট থেকে আসা শুঁটকি ব্যবসায়ি নির্মল দাস বলেন,আমি এ মেলায় ২০ বছর ধইরা হুটকি (শুঁটকি) নিয়া আসি। বাপ দাদা আইত তাই আমিও আইছি। তবে মেলায় প্রতিদিন দালালদের ৪/৫শত টাকা দিতে হয়।
এছাড়াও এ মেলার আরেকটি আকর্শন হল স্থানীয় কুমারদের হাতের তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কলস, ঝাঁঝড়, থালা, ঘটি,বদনা,বাটি,পুতুলসহ নানা ধরনের সামগ্রী।
নাম প্রাকশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় যুবক অভিযোগ করে বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে জোয়ারিদের উৎপাতে মেলার ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ এ মেলায় একসাথে জড়ো হয়। অথচ নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসন হতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত কেউ নেই। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নিবে।
মেলার নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বার বার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।






Shares