Main Menu

নাসিরনগরে পণ্যের বিনিময়ে পণ্য, ২শত বছরের পুরোনো শুঁটকি মেলা

+100%-

এম.ডি.মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর সংবাদদাতাঃ ভারতের মুর্শিদাবাদ হতে মুর্শিদকুলির বংশধরের নাম অনুসারে কুলিকুন্ডা গ্রামের নামকরণ হয়। স্থানীয় মুড়–ব্বিদের ধারণা প্রায় ৪শত বছর পূর্বে মুর্শিদকুলির বংশধরেরা এখানে এসে বসতি স্থাপন করে। নাসিরনগর সদর ইউনিয়নরে একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম কুলিকুন্ডা। বাংলাদেশি ও বাঙ্গালী জাতি হিসেবে, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারাবহিকতায় আমাদের একটি উৎসব হল পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ বাংলা নবর্বষের প্রথম দিন। এরই ধারাবাহিকতায় আজোও ধরে রেখেছে এ গ্রামটি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুলিকুন্ডা গ্রামে এ মেল অনুষ্ঠিত হয়। পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। এইটি হল এ মেলার প্রধান বৈশিষ্ট। ১লা বৈশাখে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।এই মেলার বিশেষ তাৎপর্য হল ঘরোয়া ভাবে উৎপাদিত শুঁটকির বিনিময় করা। এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের দ্বারা তৈরি করা বিভিন্ন ধরণের মাছের শুঁটকি,পিঠা,সন্দেশ এর পসরা বসিয়ে থাকেন।
বিনিময় প্রথা এই শুঁটকি মেলার মূল বিষয়। যদিও বিনিময় প্রথা এই মেলার মূল উদ্দেশ্য! তথাপি টাকার বিনিময়ে এখানে শুটকি ক্রয়-বিক্রি করার সুবিধা আছে। জানা যায় ভোর ৬টা হতে সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে পণ্যের বিনিময়ে পণ্য বিনিময়। সকাল ১০টার পরই শুরু হয় দেশের বিভিন্ন স্থান হতে আগত ভোজন রসিকদের বাহারী শুঁটকি কেনার ধুম।
সিলেট থেকে আগত একজন শুঁটকি ক্রেতার সাথে কথা হল, তিনি জানান আমি একটি অনলাইনের নিউজে শুঁটকি মেলার নিউজ দেখে এসেছি। এসে যা দেখলাম তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আমার জীবনে এমন মেলা দেখিনি। তবে শুঁটকির দাম এখানে খুব বেশি।
ঢাকার বকশী বাজার থেকে আগত একজন ভোজন রশিক বলেন, আমি প্রতি বছর এই মেলয় আসি। আমার বাবাও আসত আমিও প্রতি বছর এই মেলায় আসি। এ বছর দাম একটু চড়া হলেও শুঁটকি প্রচুর উঠেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী প্রায় দুইশ বছরেরও অধিক সময় ধরে এ মেলা বসছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুঁটকি ব্যবসায়ী এ গ্রামে আসেন শুঁটকি বিক্রি করতে। পছন্দের শুঁটকি ক্রয় করতেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসেন ভোজন রসিকরা। দুই শতাধিক নানান জাতের শুঁটকির পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। এসব পসরায় থাকে বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, লইট্টা, পুটি ও টেংরা উল্লেখযোগ্য। এমন কোন জাতের শুঁটকি নেই যা পাওয়া যায় না। তবে দেশী মাছের শুঁটকির প্রাধান্যই বেশী।

মেলায় নাসিরনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীরা শুঁটকি নিয়ে আসেন। সামুদ্রিক অনেক বিরল জাতের মাছের শুঁটকি ছাড়াও ইলিশ ও কার্প জাতীয় বিভিন্ন মাছের ডিমের শুটকি পাওয়া যায় এই মেলায়। কুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব মোল্লা বলেন, আমাদের বাপ দাদার আমলে ও এ শুঁটকি মেরা ছিল এখনও আছে। আমার ধারনা শত শত বছরের বেশী সময় ধরে নিয়মিত ভাবে এই মেলা বসছে। স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত আলু, ডাল,সরিষা, পেয়াজ,রসুনসহ এলাকার কৃষকরা তাদের নানা পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি ক্রয় করেন। এছাড়াও মেলায় গৃহস্থালী পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও কাঠের সামগ্রী বিক্রি হয়।
এদিকে উপজেলা সদরের লঙ্গণ নদীর তীরেও একই দিনে বসে “বিনিময় প্রথা” অথ্যাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দিনব্যাপী চলে মেলার কেনাকাটা। এখানে বিক্রি হয় মৃৎশিল্পীদের হাতের তৈরি মাটির হাঁড়ি ও তৈজসপত্র। স্থানীয় কুমারদের হাতের তৈরি হাড়িঁ,পাতিল, কলস,ঝাঁঝর,থালা,ঘটি,বদনা,বাটি,পুতুল ও প্রদীপসহ বিভিন্ন ধরণের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য।
এ ব্যাপারে উপজেলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জাফর বলেন, মেরাকে কেন্দ্র করে যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ মোতায়েন আছে। প্রশাসন সর্বদা সর্তক থাকবে।






Shares