Main Menu

নাসিরনগরে অভয়াশ্রমে নির্ভয়ে মাছ শিকার, চলছে অবাধে মা ও পোনা মাছ নিধন

+100%-

নিজস্ব প্রতিবেদক::: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে নদ-নদী ও বিলে গড়ে তোলা হয়েছে ৮টি অভয়াশ্রম। সরকারি নিয়মানুযায়ী মৎস্য অভয়াশ্রমে আশ্রয় নেওয়া মা মাছসহ যেকোন ধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। অথচ এসব অভয়াশ্রমে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কারেন্ট জাল, চায়না জাল, বেড় জাল ও হাজারি ছিপ দিয়ে অবাধে মা ও পোনা মাছ শিকার করা হচ্ছে। এ নিয়ে দুটি মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা নির্বাহী ও সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
লিখিত অভিযোগে নাসিরনগর ভিটাডুবি ধীবর সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাস উল্লেখ করেন, বাকলংগন নদীর অভয়াশ্রমের চারপাশে শতশত চায়না জাল দিয়ে মা মাছ শিকার করছে জেলেরা। তাছাড়াও রাতে অভয়াশ্রমটিতে প্রবেশ করে মাছ চুরি করে নিয়ে যায়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নাসিরনগরে ৮টি মৎস্য অভয়াশ্রম রয়েছে। এর মধ্যে সদরে খরতী নদী, হরিপুর ইউনিয়নে তিতাস নদী, গোকর্ণ ইউনিয়নে হরল বিল, চাতলপাড় ইউনিয়নের ধলেশ^রী ও ভিডাডুবি বাকলংগন নদীতে একটি, ভলাকুট ইউনিয়নের মগলাইন নদী ও গাইভার গুনা নদীতে দুটিসহ মোট আটটি মৎস্য অভয়াশ্রম রয়েছে। ৮টি অভয়াশ্রমের মোট আয়তন প্রায় ১০৮ হেক্টের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারিভাবে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা মৎস্য উন্নয়ন ও হাওর প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৮টি নদী-বিলে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে উপজেলা মৎস্য বিভাগ। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় ৮টির মধ্যে কেবল গোকর্ণ ইউনিয়নের হরল বিলের অভয়াশ্রমটি কার্যকর আছে। বাদবাকী ৭টি অরক্ষিত এবং চাতলপাড় ইউনিয়নের ধলেশ^রী নদীতে অভয়াশ্রমটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে বেশ কিছুদিন পূর্বে। এগুলোর খুঁটি ও বেড়া বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে সেখানে সাইনবোর্ড ছাড়া আর কোন কিছুরই চিহ্ন পাওয়া যায়না। সাইনবোর্ডে লেখা আছে,মৎস্য অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। মৎস্য অভয়াশ্রম নির্ধারিত এলাকার বাইরে মৎস্য সংরক্ষণ আইন মেনে চলুন।

জানা গেছে, অভয়াশ্রম ঘোষণার পর ওই সকল নদী ও বিলের তীরে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে বেড়া দিয়ে স্থানগুলো ঘিরে দেওয়া হয়। সরকারি অর্থায়নে বিপুল পরিমাণ বাঁশের খুঁটি, গাছ ও গাছের ডালপালা দেওয়া হয়। অভয়াশ্রম বুঝার জন্য বাঁেশর খুঁটির মাথায় লাগিয়ে দেওয়া হয় লাল নিশান। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের পাশাপাশি সেখানে প্রতি বছর ৫-৬ লাখ টাকা বিভিন্ন প্রজাতির দেশিয় প্রজাতির পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়। এসব অভয়াশ্রমে টেংরা, বোয়াল, আইর, শোল, চিংড়ি, পুঁটি, বাইম, রাণি, পলি, মেনি, বাতাশি, টাকিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আশ্রয় নেয়। সাধারণত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত এসকল দেশিয় প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়ে। ডিম ফুটে যেসব রেনু বের হয় সেগুলো বড় হয়ে প্রকৃতিতে মাছের ভারসাম্য রক্ষা করে। অথচ সুকশৌলে এসব ডিমওয়ালা মা মাছ অবাধে শিকার করা হচ্ছে।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা লিলু দাস জানান, মৎস্য অভয়াশ্রমের তীর ঘেঁষে যারা বসবাস করে তাদের তাদের মধ্যে একটি প্রভাবশালী মহল ও কিছু স্থানীয় অসাধু মৎস্যজীবীদের সহযোগিতায় রাতের আঁধারে অভয়াশ্রমে মা ও পোনা মাছ শিকার করছে। যেন দেখার কেউ নেই।
সরেজমিন বাকলংগন নদীর অভয়াশ্রমে গিয়ে দেখা গেছে, চার পাশে মৌসুমী জেলেরা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা বেড় জাল, হাজারি ছিপ দিয়ে অবাধে ১৫-২০ কেজি ওজনের মা বোয়াল মাছ শিকার করছে। চায়না জাল দিয়ে ধরা হচ্ছে ছোট ছোট রেনু মাছ।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অভয়াশ্রম ও নদী থেকে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরার অপরাধে ১০টি মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যে চায়না জাল পুড়ানো হয়েছে। অভয়াশ্রমের চার পাশে মা ও ছোট মাছ না ধরতে প্রতিনিয়ত জেলেদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বুঝানো হচ্ছে।






Shares