Main Menu

নাসিরনগরে অবৈধ দখলে কৃষি বিভাগের ১৩টি বীজাগার

+100%-

এম.ডি.মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর সংবাদদাতা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরগর উপজেলা কৃষি বিভাগের কোটি টাকা মূল্যের ১৩ টি পরিত্যাক্ত বীজাগারের ভবন অবৈধ দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব জায়গা দখল করে কেউ কবরস্থান,দোকানঘর, শহীদমিনার, মসজিদ,সুইপার কলোনি বানিয়েছেন। এ যেন সর্বত্র  সরকারি সম্পত্তি দখলের প্রতিযোগীতা।

কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকির অভাবে সরকারি এই সম্পদগুলো এখন হাতছাড়া হয়ে প্রভাবশালীদের সম্পদে পরিণত হয়েছে।  এবং কিছু কিছু ভবন বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। বর্তমানে এসব পরিত্যক্ত বীজাগার ভবন এখন স্থানীয় বখাটে, জুয়ারি ও নেশাখোদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, কৃষি বিভাগ গত ১৯৬২-৬৪ অর্থ বছরে ইউনিয়ন পর্যায়ে সহজ প্রক্রিয়ায়  কৃষকদের মাঝে উন্নত মানের বীজ, ইউরিয়াসহ বিভিন্ন উপকরণ  সরবরাহ ও বিতরণ নিশ্চিত করার লক্ষে একটি করে ইউনিয়ন বীজাগার  অফিস কাম বাস ভবন নির্মাণ করে।  যথাযথ ব্যবহার না থাকায় এবং সঠিক সিদ্ধান্তহীনতা ও সুষ্ঠ পরিচালনার অভাবে এসব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।যার প্রেক্ষিতে ভবনগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেহাত হয়ে পড়ে। কোথাও ভগ্ন, জরাজীর্ণ অবস্থায় এসব ভবনগুলো পড়ে আছে।

আবার কোথাও এসব ভবনগুলোতে এলাকার কতিপয় বখাটে যুবক, নেশাখোরদের অভয়ারণ্য  পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন এসব পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে চলছে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। এতে প্রায় প্রতিদিনই এলাকায় ঘটছে চুরি ডাকাতির মত ঘটনা।

সরেজমিনে ভলাকুট,গোয়ালনগর,ফান্দাউক,কুন্ডা,পূর্বভাগ ও নাসিরনগর ঘুরে দেখা যায় ভবনের বেহাল অবস্থা। ভলাকুট গ্রামের দিলিপ কিশোরের দখলে থাকা কৃষি অফিসের  সম্পত্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,ভলাকুটে কৃষি অফিসের দাবীকৃত জায়গা তার দাদার বৈঠক খানা ছিল। অপরদিকে কৃষি অফিস বলছে ৩৬৬৪ দাগে ৮ শতক ভূমি বারিন্দ্র দত্ত হতে অধিগ্রহণ করা হয়। যার মূলে একটি গেজেটও প্রকাশ হয়। উক্ত ভূমি নিয়ে দিলিপ কিশোর  দেওয়ানি মোকাদ্দমা নং ৭১/২০০২ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতএ মামলা করলে  বিজ্ঞ  আদালত ২৬/০৭/২০১৬ তারিখে কৃষি অফিসের পক্ষে রায় প্রদান করেন। তার পরও দিলিপ কিশোর কৃষি বিভাগের জায়গা ছাড়তে নারাজ। বর্তমানে দখলকৃত জায়গায় দোকান করে স্থানীয়দের মধ্যে ভাড়া দিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

নাসিরনগর সদরে  অবস্থিত  বীজাগারে গিয়ে দেখা গেছে স্থানীয় প্রভাবশালীররা কবর স্থানের জন্য বাউন্ডারি দিয়ে বীজাগার ভবন দখল করে নিয়েছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়নের কৃষি অফিসের বীজাগার ভবনটি সিদ্দিকুর রহমান হতে অধিগ্রহন করা হয়। পরে আব্দুল হাই শহিদুল হকের নিকট বিক্রি করে দেয়। বর্তমানে  ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল হকের দখলে রয়েছে বীজাগারটি।

ফান্দাউক ইউনিয়নের বীজাগারটি স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা প্রভাব খাটিয়ে কেয়ার নামক একটি এনজিওকে দীর্ঘ  দিন যাবৎ ভাড়া দেয় এবং বাজার কমিটির সহায়তায় সুইপারদের জন্য আরেকটি ঘর তৈরি করে ভাড়া দেয়া হয়।

কুন্ডা ইউনিয়নের বীজাগারটি কিছু স্থানীয় লোকেরা দখল করে মসজিদ নির্মাণ করেছে। তাদের ধারনা মসজিদের নামে সরকারি সম্পত্তি দখল করলে সরকারও কিছু করতে পারবেনা।

পূর্বভাগ ইউনিয়নের বীজাগারটির জায়গা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দখল করে সেখানে শহীদমিনার তৈরি করেছেন। অথচ উক্ত স্কুলে পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকা সত্বেও কৃষি অফিসের জায়গা দখলের মহোৎসব চলছে উপজেলার সর্বত্র।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মো: আনিছুজ্জামান বলেন, এই বীজাগার প্রায় ১৯৬২-১৯৬৪ সালে নির্মিত। আমি প্রায় এক বছর ধরে এখানে কর্মরত আছি। পুরাতন ফাইলপত্র বের করে নাসিরনগর কৃষি অফিসের সকল বেদখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। একদিকে দখল মুক্ত করছি অন্যদিকে স্থানীয়রা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পুনরায় আবার দখল করছে। তিনি স্বীকার করেন বীজাগারের কোন কার্যক্রম না থাকায় বর্তমানে ভবনগুলো বেদখলে রয়েছে।






Shares