Main Menu

পুলিশের ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি

নাসিরনগরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ::নারী শিশু সহ আহত ৪০ পরিস্থিতি এখনো থমথমে।

+100%-

মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর সংবাদদাতা:: জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নারী ও শিশুসহ উভয়পক্ষের ৪০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের পর শুরু হয় বাড়িঘরে ভাংচুড়। এদিকে দু’পক্ষের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার সময় ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। পরিস্থিতি এখনো থমথমে। দুদিন ধরে পুলিশ মোতায়েন। ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন নাসিরনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ কবির হোসেন।
গতকাল বুধবার (২২মে) বিকাল ৫টার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের মছলেন্দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মছলেন্দপুর গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই ভাই প্রবীর রায় ও কালী প্রসন্ন রায়ের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে উভয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের এক পক্ষ প্রবীর রায়কে সমর্থন করছে একই গ্রামের রাজ্জাক মেম্বার ও অপরপক্ষ কালী প্রসন্ন রায়কে সমর্থন করছে এড্যা. মজিবুর রহমান।
এ দিকে প্রবীর রায় ও তার স্ত্রী মমতা রাণী রায় অভিযোগ করে বলেন, আমার শশুরের সম্পত্তি দুই ভাইয়ের মধ্যে সমান ভাবে বন্টন হবে। সেটা না করে বাবার মৃত্যুর পূর্বে কালী প্রসন্ন রায় সকল সম্পত্তি লিখে নেয়। এই নিয়ে আমি আদালতে মামলা করেছি এবং নাসিরনগর থানায় সাধারণ ডায়রী করেছি। থানায় ডায়রীর মূলে নাসিরনগর থানা পুলিশ তদন্ত করতে আসলে এড্যা. মজিবরের লোক সাজু মিয়া পুলিশের কাজে বাধা দেয় এবং মসলেন্দপুর ওয়ার্ডের মেম্বার রাজ্জাককে পুলিশের উপস্থিতিতে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ উভয় পক্ষকে শান্ত করে বাড়িতে যেতে বলে। এই ঘটনা ঘটে ২০ মে বিকেল ৫টার সময়।
রাজ্জাক মেম্বারকে হরিণের সাথে তুলনা আর মজিবরকে বাঘের সাথে তুলনা করে ২০ মে রাত ৮টা পনের মিনিটে এড্যা. মজিবরের ভাতিজা মোঃ আমান সরকার তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দেয়। স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে দেয়ার পর রাজ্জাক মেম্বারের সমর্থক বিদেশ ফেরত রিপন মিয়া আমান সরকারকে রাস্তায় পেয়ে জিজ্ঞেস করে। পরে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়।
এর পর ২২মে বিকেল ৫টার সময় রাজ্জাক মেম্বারের ভাতিজা ইকরামুল গরু নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে মজিবরের চাচাত ভাই শাহব উদ্দিন তাকে মারধর করে। মারধরের ঘটনা ও ফেসবুকের বিষয়টি রাজ্জাক মেম্বাররের লোকদের মধ্যে জানাজানি হলে দেশিয় অস্ত্র নিয়ে সজ্জিত হয়ে শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এ সংঘর্ষ চলে টানা দুঘন্টা পর্যন্ত। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৭ রাউন্ডা ফাঁকা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে নারী শিশুসহ ৪০জন আহত হয়।
নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) মোঃ সাজেদুর রহমান জানান, রাজ্জাক মেম্বার ও এড্যা. মজিবুরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে মামলা মোকদ্দামা চলে আসছিল। ২০মে পুলিশ প্রবীর রায়ের স্ত্রী মমতা রাণীর অভিযোগের তদন্ত করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এর পর ২২ মে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছাড়া হয়। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে নাসিরনগর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলার হয়নি।
রাজ্জাক মেম্বারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, হিন্দু সম্পত্তি দখল নিতে যায় মজিবরের লোকজন। আমার লোকজন বাধা দিলে পুলিশের সামনেই আমাদের মারধর করা হয়। পরে সংঘর্ষ বেধে গেলে আমার লোকজন মারত্বক ভাবে জখম হয়। এবং আমার বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুর করা হয়। জখম ব্যক্তিরা হলেন মমিন খা(৩৫) মতিউর রহমন(৪৫) জয়নাল মিয়া(২৪) কামরুল(২৩) তহিদ মিয়া(৩২) বশার(৫০) আলামিন(২৮) পারভেজ(২৬) ছালাম(৩৪) আজিজুর রহমান(৩৩) মোনায়েম(২৬) রহিমা বেগম(২২) আরিফু(১৯) লেছু মিয়া(৩৮) তকদির(২৮) ছায়েরা খাতুন(৪৬) শরিফা বেগম(১৬) ছরুফ মিয়া(৩৫) একরামুল( ২৫) প্রমুখ।
এড্যা. মজিবরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, হিন্দু সম্পত্তি আমার কোন লোকজন দখল করতে যায়নি। পুকুরের ইজারা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। এত আমার লোকজনদের কোন অপরাধ নেই। সংঘর্ষে আমার লোকজন বেশি জখম হয়েছে।
অপরদিকে প্রবীর রায়ের স্ত্রী মমতা রাণী রায় বলেন, আমাদের পরিবারিক ভাবে জমি নিয়ে সমস্যা আছে। সে সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা আদালতে মামলা করেছি এবং নাসিরনগর থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি। কিন্তু মজিবরের লোকজন আমার স্বামীর অপর ভাই কালী প্রসন্ন রায়কে ইন্দন দিচ্ছে আমাকে বাড়ি হতে উচ্ছেদ করার জন্য। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে বাধা দিতে আসে রাজ্জাক মেম্বার।






Shares