Main Menu

হামলায় আহত ব্যাক্তির মৃত্যু।। লাশ নিয়ে সালিশ বাণিজ্য, বিচারের দাবীতে বিধবা স্ত্রী থানায়

+100%-
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ঃ সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার ইটভাটা শ্রমিক আহাদ মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার সকালে মারা গেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। নিহত শ্রমিক শাহবাজপুর গ্রামের বসুরউদ্দিনপাড়ার বাসিন্দা দরিদ্র মো. রফু মিয়ার ছেলে। এদিকে ইটভাটা শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা সালিশের মাধ্যমে নিস্পত্তি করতে স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি ও সমাজপতিরা শুক্রবার দুপুর থেকে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা সরাইল থানার ওসির সহযোগিতা নিয়ে সালিশ-বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপরদিকে গতকাল শনিবার সকালে বিষয়টি জানতে পেরে নিহতের স্ত্রী মনজিরিনা বেগম স্বামী হত্যার ন্যায় বিচারের দাবিতে দুই শিশুপুত্র নিয়ে থানায় এসে ওসির কাছে একটি লিখিত আবেদন করেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বিরোধের জের ধরে শাহবাজপুর জমাদারপাড়ার বাসিন্দা মো. দুধ মিয়ার ছেলে জুম্মান মিয়া (২০) সহ অন্যরা গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে একই এলাকার কাছম আলীর ছেলে রাহাত মিয়ার (২১) ওপর হামলা চালায়। রাহাত শাহবাজপুর প্রথম গেইট বাসষ্ট্যান্ডে একটি দোকানে বসা ছিল। এসময় হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে রাহাতের মামা ইটভাটার শ্রমিক আহাদ মিয়া এগিয়ে আসলে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। গুরুতর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হামলায় রাহাত আহত হয়। এ ঘটনায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাহাতের পিতা কাছম আলী বাদী হয়ে জুম্মানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেন। এ অভিযোগ পুলিশ এজাহার হিসেবে নিয়ে এফ.আই.আর করে। এ নিয়ে গত ২৫ মার্চ শাহবাজপুর ইউপি কার্যালয়ে চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এলাকার সমাজপতিরা সালিশ করেন। সালিশের রায়ে এ ঘটনায় জুম্মানকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মামলার বাদী কাছম আলী বলেন, জরিমানার ৪০ হাজার টাকা পেয়েছি। বাকি টাকা মামলা নিস্পত্তির পর দেওয়ার কথা ছিল। থানায় আপোসনামা জমা দেওয়ার প্রস্তুতি মুহুর্তে এ ঘটনায় জখমী আহাদ মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। লাশ মর্গে রেখেই ইউপি চেয়ারম্যানসহ মাতব্বররা বিষয়টি নিস্পত্তি করতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, সামাজিক বিচার সঠিকভাবে না হলে, আমরা আইনের আশ্রয় নিব।
সরাইল থানা ক্যাম্পাসে নিহত আহাদ মিয়ার স্ত্রী মনজিরিনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, একজন মুসলিম নারীর স্বামী মারা গেলে ৪০দিন পর্যন্ত সেই নারী পর্দার আড়ালে থাকার নিয়ম। কিন্তু ওরা আমাকে পর্দার আড়ালে থাকতে দিল না। প্রভাবশালী কিছু জনপ্রতিনিধি ও সমাজপতিরা আমার স্বামীর মৃত্যু ও লাশ নিয়ে সালিশ বাণিজ্য শুরু করে দিয়েছে। মনজিরিনা আরো বলেন, আমার দু’টি অবুঝ শিশু। ঠিকমত তাদের মুখে খাবার দিতে পারি না। সন্ত্রাসী হামলার পর আমার স্বামীর মুখ দিয়ে প্রচুরপরিমাণ রক্ত ঝড়েছে। টাকার জন্য ভাল চিকিৎসা করাতে পারেনি। মৃত্যুর তিনদিন আগ থেকে তার শরীরের বিভিন্ন অংশের মাংসপেশী ফেটে অঝরে রক্ত ঝড়ে। তখন গ্রামের কারো  সহযোগিতা পায়নি। এখন তারা লাশের দরদাম সাব্যস্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ওসি সাহেবের কাছে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে লিখিত আবেদন করেছি। প্রয়োজনে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিব। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাদীর অবহেলা ও পুলিশের গাফিলতির কারণে এ মামলার অন্যতম দুই আসামি সুলমান ও জুনাইদ মিয়া বিদেশ চলে গেছে।
এ ব্যাপারে শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান উসমান উদ্দিন খালেদ বলেন, বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে নিস্পত্তি করে দিয়েছিলাম। এ ঘটনায় আহত ব্যক্তি মারা যাওয়ায় নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এটিও সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা (সমাজপতি) আলোচনায় বসব। এতে সমাধান না হলে আমরাই আপনাদেরকে জানাবো। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উত্তম কুমার চক্রবর্তী বলেন, এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা তদন্তাধীন আছে। মামলার জখমী সাক্ষী আহাদ মিয়া আঘাত জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছে দাবি করে নিহতের স্ত্রী মামলায় খুনের ধারা ৩০২ দঃবিঃ সংযুক্ত করার আবেদন করেছেন। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।






Shares