Main Menu

সরাইলে বাল্য বিয়ের করুন পরিনতি:: ৭ দিন পর পাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু- ৩ লাখ টাকায় রফাদফা

+100%-

BBমোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল থেকেঃশিশুটির নাম অঞ্জনা। বয়স ১২ বছর ৯ মাস ৯দিন(বিয়ের দিন পর্যন্ত)। উপজেলার ইসলামাবাদ(গোগদ) গ্রামের মিন্টু ঠাকুরের কন্যা। মাতা নেহেরা খাতুন। পাশের গ্রামের মহালধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেছিল। উত্তীর্ণ হতে পারেনি। শিশু অঞ্জনা যখন সহপাঠিদের সাথে ঘুরে ফিরে খেলছে, নাচছে, গাইছে, পড়ছে।

বিয়ে এবং সংসার কি? সেটা বুঝে উঠার আগেই ওই শিশুটির পরিবারের অভিভাবকদের মাথায় বিয়ের চিন্তা চেপে বসে। পাত্রের বয়স কোন বিষয় না। সৌদী প্রবাসী স্বামীর টাকার অভাব নেই। লোভ সামলাতে পারেনি শিশু অঞ্জনার পরিবার। বাড়িউড়া গ্রামের আবদুল হাইয়ের ছেলে নূর আলমের (৩০) সাথে শিশুটির বিয়ে হয় গত ৫ আগষ্ট।

পাত্রী অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় গত শুক্রবার রাতে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে অঞ্জনা। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। অঞ্জনার মৃত্যুকে ঘিরে নানা রহস্যের উদ্ভব হচ্ছে বাড়িউড়া ও ইসলামাবাদ গ্রামে। ৩ লাখ টাকায় রফাদফা করে ময়না তদন্ত ছাড়াই গতকাল শনিবার ওই শিশুর লাশটি দাফন করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও অঞ্জনার বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার অনুযায়ী অঞ্জনার জন্ম ২০০৩ সালের ১৬ মার্চ। ২০১৩ সালে সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে সে। গত ৫ আগষ্ট নিজের বাড়িতে ঘটা করে ধূমধামের মাধ্যমে অঞ্জনার বাল্য বিয়ে হয়। পরিবার ও সমাজের সকলে মিলে স্বামীর হাতে তুলে দেয় শিশুটিকে। ৫ তারিখ দিবাগত রাত থেকেই স্বামী স্ত্রী একসাথে রাত্রি যাপন শুরু করে। গত শনিবার রাতের কোন এক সময় প্রচন্ড রক্তক্ষরণের কারনে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে অঞ্জনা। চিকিৎসার জন্য স্বামীর বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে যায় জেলা সদরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। সেখানে যাওয়ার পর অঞ্জনা মারা যায়। লাশ হাসপাতালে ফেলে রাতেই পালিয়ে যায় স্বামীর স্বজনরা। সেই সাথে তারা বাড়িঘরও ছেড়ে দেয়। অঞ্জনার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে তার বাবা মিন্টু মিয়া।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, অপ্রাপ্ত বয়স্ক অঞ্জনা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারনে মারা গেছে। এ বয়সে বিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি। ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে মাঠে নেমে পড়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মোঃ সুলমান মিয়া সহ একাধিক সালিসকারক। শুরু হয়ে যায় দর কষাকষি। গতকাল সকাল ৯টায় মিন্টু মিয়ার বাড়িতে উভয় পক্ষের লোকজন নিয়ে বসে সালিস সভা। সেখানে ছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ সহ সালিসকারকরা। সালিসে শিশু অঞ্জনার লাশের মূল্য নির্ধারন করা হয় ৩ লাখ টাকা। টাকাটা ছেলের পক্ষ পাত্রী পক্ষকে দিবে। পরে ময়না তদন্ত ছাড়াই বাদ যোহর অঞ্জনার লাশ দাফন করা হয় ইসলামাবাদ পিতার পারিবারিক কবরস্থানে।

নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাজী আশব আলী বলেন, এ বিয়ে সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। মহালধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, অঞ্জনা আমার বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার বয়স এখনো ১৩ই হয়নি। এটা নিশ্চিত বাল্য বিয়ে। বিয়ে সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।আজ (গতকাল) দেখলাম তার লাশ দাফন হচ্ছে। ইউপি সদস্য সুলমান মিয়া ৩ লাখ টাকায় বিষয়টি রফাদফার কথা স্বীকার করে বলেন, এটা অন্য কিছু না। শুধু যৌতুক ও বিয়ের খরচের টাকাটা তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে। অঞ্জনার পেটে ও কোমরে ব্যাথা হয়েছিল। তাই মারা গেছে। স্কুলে জন্ম তারিখ কত জানি না। আমার আগের মেম্বার তাকে জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়েছেন। এখানকার কাজী কে আমি চিনি না। নিহত অঞ্জনার বাবা মিন্টু ঠাকুরের মুঠোফোনে (০১৭৭১-১১০৫৬৭) একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।






Shares