Main Menu

সরাইলে আ’লীগ নেতার হুমকিতে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি পন্ড

+100%-

সরাইলে আওয়ামীলীগ নেতা আবু মুছা মৃধার হুমকিতে পন্ডু হয়ে গেছে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি। উপজেলার কালীকচ্ছ এলাকায় শহীদ মিনার নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহন ও প্রতিষ্ঠাকালীন ১০ সদস্যের একটি কমিটির তালিকাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। এ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মাসুদ ও সম্পাদক ইউপি আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সলিম উদ্দিন। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে হতাশা ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সেখানের লোকজনের মধ্যে।

দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে না পারার কষ্টে ভুগছে শিক্ষার্থীরা। আর একেবারে ফাঁকা শহীদ মিনারের আশপাশের লোকজনের মধ্যে বিরাজ করছে উত্তেজনা।

২৬ মার্চ সকাল ৮টায় সরজমিনে দেখা যায়, কালীকচ্ছ বাজারে ইউনিয়ন পরিষদের জায়গায় স্থানীয় কয়েকজন লোকের উদ্যোগে সম্প্রতি নির্মিত শহীদ মিনারটিতে কোন ফুল নেই। অন্যান্য দিনের মতই দাঁড়িয়ে আছে স্তম্ভ গুলো। নেই লাইটিং। নেই কোন পরিচ্ছন্নতা। একেবারেই জনমানব শুন্য। শহীদ মিনারের আশপাশে চলছে সুনসান নীরবতা। সামনের যে খালি মাঠে থাকত সহস্রাধিক লোকের উৎসব মুখর পরিবেশ। সেই জায়গায় শুধু মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলছে-‘ আজকে কেন তোমরা এখানে আসনি? কেন লাইন ধরে ২১ ফেব্রুয়ারীর মত ফুল দিচ্ছ না? কে তোমাদের না করেছে? তারা ভাল মানুষ না। তাদের কথা কেন শুনেছ? আস দেখি কে তোমাদের বাঁধা দেয়?’

পাশের একটি দোকানে বসা স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. সরাফত আলী সহ কয়েকজন ইউপি সদস্য। চেয়ারম্যান বলেন, আমি পরিষদের সকলকে নিয়ে এ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে দেশের জন্য শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছি গত ৪-৫টি দিবস ধরে। কিন্তু গত ২ দিন আগে এমপি সাব নাকি ইউপি আ’লীগের সভাপতি মুছা মৃধার অভিযোগের কারণে আমাদের একজনকে আজ (গতকাল) শহীদ মিনারে জাতীয় দিবসের কোন কর্মসূচি পালন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। জাতীয় দিবসে আ’লীগ নেতার দ্বারা এমন বাঁধা। কিভাবে সম্ভব হল। বুঝতেও কষ্ট হচ্ছে। দখলদারদের উচ্ছেদ করে নির্বাহী কর্মকর্তা কত সুন্দর একটি পরিবেশ করে দিয়েছেন। আর উনার নাম না থাকায় এমন কাজ করতে পারলেন?

মো. সলিম উদ্দিন বলেন, এ শহীদ মিনারে গত ৪-৫টি দিবসে মানুষের অনুপ্রেরণা দৃষ্টান্ত হওয়ার মত। কিন্তু সাবেক চেয়ারম্যান ও আ’লীগের সভাপতি মুছা মৃধা হঠাৎ করে জামাত শিবির এখানে হামলা চালিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে বলে একটি বার্তা এমপি মহোদয়ের মাধ্যম মাসুদকে জানিয়েছেন। সেইজন্য এমপি মহোদয়ও শহীদ মিনারে কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন বাঁধা গ্রস্ত হওয়ায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির সভাপতি সাংবাদিক মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা করেছি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ। তখন আমরা ১০ জন ছাড়া আর কাউকে পায়নি। গত ডিসেম্বর মাসে মুছা মৃধা ও উনার ভাই কমিটিতে উনার পরিবার বা গোষ্ঠীর কাউকে রাখার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। আমি অপারগতা প্রকাশ করি। এরপরই তিনি শহীদ মিনারের কমিটির পেছনে লেগে যান। উনার মূল উদ্যেশ্য হচ্ছে আধিপত্য বিস্তার করা। তাই বিভিন্ন সময় বিএনপি’র লোকজন নিয়ে সভা করে কমিটির তালিকা ভাঙ্গা ও শহীদ মিনারে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে না দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন। নাম প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, কমিটির লোকজনই শহীদ মিনারটি নির্মাণ করেছেন। হালে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। উচ্ছেদকৃত দখলদার ও সরকার বিরোধী কিছু লোকের ইন্ধনে শহীদ মিনারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

মুছা মৃধা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কমিটির তালিকা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমপি সাহেবের মাধ্যমে বিষয়টির নিস্পত্তির চেষ্টা করা হয়েছে। তারা আসেনি। স্থানীয় লোকজন দ্বারা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটার সম্ভাবনার বিষয়টি আমি এমপি মহোদয়কে জানিয়েছি।

ওদিকে সরাইল সদরের শহীদ মিনারে ৪৭ তম স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়েছে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ২১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা করে উপজেলা প্রশাসন।

পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রশাসন, সরাইল থানা, আওয়ামীলীগ, বিএনপি, এমপি’র নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি, সরাইল প্রেসক্লাব, সরাইল মহিলা কলেজ,বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও এনজিও প্রতিনিধিরা পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। পরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি আধা স্বায়ত্বশাসিত ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পুলিশ আনসার ভিডিপি, গার্লস গাইড, কাব স্কাউট দল ও বিভিন্ন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুচকাওয়াজ শরীর চর্চা প্রদর্শন শেষে সালাম প্রদান করে।

মঞ্চে বসে সালাম গ্রহন করেন সংসদ সদস্য এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান, নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ইসরাত, আ’লীগের আহবায়ক এডভোকেট নাজমুল হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ প্রমূহ।

দুপুর ১২টায় শহীদ মিনার চত্বরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক অনাঢ়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপজেলার ২ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।






Shares