Main Menu

দাদন ব্যবসায়ীর ছলাকলা!

+100%-

sar 10-9-15
মোহাম্মদ মাসুদ :: সরাইলে দাদন ব্যবসায়ি ও সাবেক ইউপি সদস্য হুমায়ূন মিয়া স্থানীয় সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব খানকে নাজেহাল করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ওই বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ হুমায়ুন মিয়া তার দুই ছেলে সোলার্স মিয়া (২৫) ও সবুজ মিয়া (২০) কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থীরা দাদন ব্যবসায়ির বিচারের দাবীতে ইউএনও’র কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে। গত বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সরাইল পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (ঝাড়ুদার) রহিছ খান ছয় বছর আগে এলাকার চিহ্নিত দাদন ব্যবসায়ী হুমায়ুন মিয়ার নিকট থেকে মাসে ২৭’শ টাকা লাভ দেয়ার চুক্তিতে ৩০ হাজার টাকা ঋন গ্রহন করেন। ইতিমধ্যে রইছ খান শুধু সুদ বাবদ হুমায়ুনকে দেড় লক্ষাধিক টাকা প্রদান করেছেন। গত দুই মাস আগে মূল টাকা পরিশোধ করার প্রস্তাব করলে হুমায়ুন বেঁকে বসেন। এ সময় হুমায়ুন ও তার লোকজন ৬৫ হাজার টাকা দাবী করেন। পরে রহিছ খানের স্বাক্ষর করা একটি খালি চেক রেখে হুমায়ুন বিষয়টি নিস্পত্তির আশ্বাস দেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে ১ লাখ ২২ হাজার টাকার চেক জালিয়াতির অভিযোগে হুমায়ুন রহিছের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। একই সাথে তাকে নানা ভাবে হুমকি ধমকি দিতে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার সাড়ে তিনটার দিকে রইছের স্ত্রী রহিমা খাতুন ও কলেজ পড়ুয়া মেয়ে লাকি বেগম উপজেলা সদরের হুমায়ুনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। তারা হুমায়ুনকে শিগগরি টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে নির্বৃত্ত করার অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে হুমায়ুন ও তার দুই ছেলে মা মেয়ের উপর চড়াও হয়ে শাররিক ভাবে লাঞ্চিত করেন। খবর পেয়ে বিকেল পৌনে চারটার দিকে মো. আইয়ুব খান ও সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় আইয়ুব খানও রহিছ খানকে হয়রানি না করার অনুরোধ করলে হুমায়ুন ক্ষিপ্ত হয়ে তাকেও নাজেহাল করেন। ঘটনাটি মূহুর্তের মধ্যে বিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী বিকাল ৪টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে দাদন ব্যবসায়ী হুমায়ুনের বিচার দাবী করে তার বিরুদ্ধে নানান শ্লোগান দিতে থাকে। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে হুমায়ুনের বিচারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। রাত ৮টার দিকে রহিমা খাতুন তারা মা মেয়েকে লাঞ্চিতের বিচার ও দাদন ব্যবসায়ী হুমায়ুনের হাত থেকে রক্ষার জন্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে হুমায়ুন ও তার দুই ছেলেকে নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করা হয়। দুই ঘন্টা শুনানীর পর রহস্যজনক কারনে কোন রায় ছাড়াই শেষ হয় ভ্রাম্যমান আদালত। পরে তাদেরকে পুনরায় থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাত ১টার দিকে থানায় বসে রহিছ খান হুমায়ুনকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নাটকিয় ঘটনার ইতি টানেন।

মো. আইয়ুব খান বলেন, আমার কর্মচারীকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রভাবশালী হুমায়ুনের হাতে নাজেহাল হতে হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।

অভিযুক্ত হুমায়ুন একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি সরাইলের কোটিপতি। লোকজন প্রয়োজন হলে আকুতি মিনতি করে। আমি তাদেরকে টাকা দেয়। পরবর্তীতে টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করলে মামলা দিতে বাধ্য হয়। আমার কাছে পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কারো কোন চেক বই গচ্ছিত নেই।

নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে মামলা থাকায় এটি ভ্রাম্যমান আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত।

সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলী আরশাদ বলেন, রাতে থানায় বসে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে রহিছ হুমায়ুনকে ৫০ হাজার টাকা নগদ প্রদান করার ভিত্তিতে বিষয়টি নিস্পত্তি করা হয়েছে। হুমায়ুন মামলা তুলে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।






Shares