Main Menu

করোনাভাইরাস: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জানাজায় লকডাউনের ভেতর এতো মানুষ কীভাবে এলেন?

+100%-

বিবিসি বাংলা:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জানাজায় গণজমায়েতের ঘটনার পর আশেপাশের আটটা গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় দুইজন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা ও তার আশেপাশের আটটি গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে। সেখানকার সব মানুষকে ঘরে থাকার অনুরোধ করা হয়েছে।

জানাজায় জনসমাগম রুখতে না পারার কারণে সরাইল সার্কেল এএসপি ও সরাইল থানার ওসিকে প্রত্যাহার করেছে পুলিশ।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এ ধরণের জমায়েত ঠিক হয়নি। এতে সংক্রমণ আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছি। এই জমায়েত ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বাংলাদেশের সব জায়গায় সব ধরণের জনসমাগম-এমনকি ধর্মীয় জমায়েতও নিষিদ্ধের মধ্যে শনিবার সকালে স্থানীয় একজন জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা যোবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজার সময় হাজার হাজার মানুষের জনসমাগম হয়।

ফলে করোনাভাইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে জেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।সিভিল সার্জন ডা. মোঃ একরাম উল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এর মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এই জনসমাগমের ফলে সেই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ১১ই এপ্রিলই লকডাউন ঘোষণা করা হয়।এই জেলায় এখন পর্যন্ত ১০ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

আটটি গ্রাম লকডাউন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় সাংবাদিক মাসুক হৃদয় জানান, যে আটটি গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে, সেগুলো মূলত ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের দুইপাশে অবস্থিত।

জানাজায় এসব গ্রাম থেকে বেশিরভাগ মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এসব গ্রামে মাইকিং করে পুলিশ সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছে। কোন কিছুর দরকার হলে পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। পুলিশ সেসব জিনিস পৌঁছে দেবে।

তবে স্থানীয়রা এই সাংবাদিকের কাছে দাবি করেছেন, ওই জানাজায় তাদের এলাকার কম মানুষ অংশ নিয়েছেন। বেশিরভাগ এসেছেন হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে। কারণ এই হুজুরের বেশিরভাগ সমর্থক সেসব এলাকায়। এখন এর দায়ভার তাদের নিতে হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।

তিন পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

জানাজায় ব্যাপক জনসমাগম ঠেকাতে না পারার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এএসপি সার্কেল (সরাইল) ও সরাইল থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

পুলিশ সদর দপ্তরের একটি বার্তায় জানানো হয়েছে, জানাজায় লোক সমাগমের ঘটনা তদন্তে তিন সদসের‍ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২২শে এপ্রিলের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে হবে।
লকডাউনের ভেতর এতো মানুষ কীভাবে এলেন?

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিক মাসুক হৃদয় জানাচ্ছেন, এই জমায়াতে অংশ নেয়া হাজার হাজার মানুষ শুধু আশেপাশের গ্রামগুলো থেকেই নয়, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদীর বিভিন্ন থানা এলাকা থেকেও এসেছেন।

তারা মূলত পিক-আপ, ভ্যানগাড়ি, ইজি বাইক, সাইকেল চালিয়ে জানাজায় এসেছেন। এ সময় তাদের মহাসড়কে কোন বাধা দেয়া হয়নি।

নাসিরনগর, সরাইলের মতো উপজেলাগুলো নৌকায় করে অনেকে এই জমায়েতে এসে অংশ নেন বলে জানা গেছে।

মাসুদ হৃদয় বলছেন, ”এই ব্যক্তির বেশিরভাগ সমর্থক হাওর এলাকার গ্রামগুলো। এসব এলাকায় বছরের বেশিরভাগ সময় নৌকা চলাচল করে। এই ব্যক্তিরা নৌকায় করে এই সমাবেশে এসেছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।”

প্রত্যাহার হওয়ার আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানার ওসি শাহাদত হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, “তিনি এখানে একটি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। গতকাল (শুক্রবার) মারা যাওয়ার পর রাতে তার মরদেহ মাদ্রাসায় নিয়ে আসা হয়।”

“আমরা রাতেই গিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করি। তারাও জানায় জানাজায় বড় ধরণের জমায়েত করা হবে না।”

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬শে মার্চ থেকে অঘোষিত লকডাউন চলছে।১৬ই এপ্রিল পুরো দেশ সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সকল প্রকার জনসমাবেশ, অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কিন্তু জানাজায় কোনো ধরণের জমায়েতের পরিকল্পনা না থাকলেও সকালে জানাজার আগে দিয়ে মাদ্রাসার মাঠে হঠাৎ করেই কয়েক হাজার মানুষ আসা শুরু করে বলে জানান শাহাদাত হোসেন।

“সেসময় কয়েকজন পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে এত মানুষ এসে পড়ে যে আমাদের আর কিছুই করার থাকে না।”

পুলিশ ধারণা করছে যোবায়ের আহমেদের মৃত্যুর খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকার মানুষ তার মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারে।
সংক্রমণ আরো বাড়ার আশঙ্কা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোঃ একরাম উল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এর মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এই জনসমাগমের ফলে সেই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

তিনি জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাদ্রাসার আশেপাশের আটটি গ্রাম লকডাউন করে দেয়া হয়েছে।

”আমরা সেখানে অংশ নেয়া সবাইকে আহবান করছি, তারা যেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন।”

”কারো মধ্যে উপসর্গ দেখা গেলেই যেন আমাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে। তাহলে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আমরা পরীক্ষার ব্যবস্থা করবো।” বলছেন মি. একরাম উল্লাহ।






Shares