Main Menu

সরাইল ভূমি অফিসের ঘুষ বাণিজ্য! “২৯ শতক নাল জমির নাম খারিজ ২৫ হাজার টাকা

+100%-

সরাইল প্রতিনিধিঃ সরাইল ভূমি অফিসের সিটিজেন চার্টার শুধু লোক দেখানো। ভেতরে অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারিদের ঘুষ বাণিজ্য সিটিজেন চার্টারকে কবর দিচ্ছে। আর লোকজনের হয়রানি তো আছেই। পদের সাথে দায়িত্বের কোন মিল নেই এ অফিসের কর্মচারিদের। ঘুষ দিয়েও ৪-৫ মাস ঘুরতে হচ্ছে সাধারন লোকদের। আবার মাঝে মধ্যে গ্রাহকদের শুনতে হয় চটকদারি উক্তি।

সরাইল সদর ইউনিয়নের কুট্রাপাড়া গ্রামের বাসিন্ধা আবদুর রহিমের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৭২)। কুট্রাপাড়া এলাকার ২৯ শতক নাল জমির ক্রয়সূত্রে মালিক তিনি। গত মাঠ জরিপে নিজ নামে বিএস ও হয়ে এসেছে। গত ৫ মাস আগে ওই জায়গার নাম খারিজের জন্য আসেন সরাইল সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। নিয়ম মাফিক ইউনিয়ন উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর মিয়ার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপ্রত্র সহ আবেদন করেন বৃদ্ধা রাবেয়া। কিছুদিন পর খুঁজ নিতে এসে দেখেন কিছুই হয়নি। প্রথমে কারন বুঝতে পারেননি। পরে রাবেয়া বুঝেছেন ঘুষ ছাড়া আবেদন হাঁটবে না। জাহাঙ্গীর মিয়ার সাথে কথা বলেন। জাহাঙ্গীর মিয়া এ খারিজ করতে ২৫ হাজার টাকা দাবী করে বসেন। রাবেয়ার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন। পরে জাহাঙ্গীরকে এ কাজের জন্য ১৫ হাজার টাকা দেন রাবেয়া। আরো ১০ হাজার টাকা দাবী করে বসেন জাহাঙ্গীর। অপারগতা প্রকাশ করেন রাবেয়া। এরপর রাবেয়া শুধু অফিসে আসেন আর যান। জাহাঙ্গীর রাবেয়াকে কয়েক দিনের মধ্যে হয়ে যাবে বলে ঘুরাতে থাকেন।

গত ৫ মাস ধরে ১৫ হাজার টাকা দিয়েও ভূমি অফিসে ঘুরছেন রাবেয়া। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বৃদ্ধা রাবেয়া এখন দিশেহারা। পরিত্রাণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছেন। অথচ ওই ভূমি অফিসের সিটিজেন চার্টারে লিখা আছে নাম খারিজের কেইস অনুমোদনের পর ১১৫০ টাকা সরকারি কোষাঘারে জমা দিতে হবে। আর কোর্ট ফি লাগবে ২০ টাকার। সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন। ওই লেখার ধারে কাছেও নেই জাহাঙ্গীর সাহেবেরা।

রাবেয়া বেগম বলেন, ৫ মাস আগে কাগজপত্র ও টাকা দিয়েছি। সেই সময় কাগজ দেখেই তো উনি খারিজ করে দেওয়ার জন্য রেখেছেন। ২৫ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। ১৫ হাজার দিয়েছি। বাকী ১০ হাজার টাকার জন্য আমার কাজ করছেন না। শুধু ঘুরাচ্ছেন।

গত কয়েক দিন আগে সরাইল মৌজার ১৭৩১২ দাগের ২৮ শতক নাল জমির খাজনা দিতে অফিসে আসেন তৈয়ব আলীর উত্তরাধিকারীরা। জাহাঙ্গীর তাদেরকে জানিয়ে দেন এ দাগে তৈয়ব আলীর আর কোন জায়গা নেই। ২দিন পর তৈয়ব আলীর জনৈক ছেলে অফিসে এসে বিশেষ ভাবে যোগাযোগ করে মাসোয়ারা দিলে তিনি ২৮ শতক নাল জমির খাজনা রেখে রশিদ প্রদান করেন। প্রশ্ন হচ্ছে ২ দিন আগে বললেন জায়গাই নেই। এরপর জায়গা কোথায় থেকে আসল?

সরাইল সদর ইউনিয়নের জনৈক ব্যক্তি লীজ সূত্রে সরকারি জায়গার ৩ টি দোকানের মালিক। প্রতি বছর দোকান প্রতি ১১’শ টাকা জমা দিতে হয়। নিয়ম মাফিক বছর শেষে লীজের টাকা সরকারের কোষাঘারে জমা দিয়ে যাচ্ছেন। গত ফেব্রুয়ারী মাসে ৪ বছরের জমা বাবদ জাহাঙ্গীরের কাছে ১৬ হাজার জমা দেন ওই দোকানের লীজ সূত্রে মালিকরা। কিন্তু গত ৫ মাস ধরে জাহাঙ্গীর শুধ ফাইল পুটাপের কথা বলে তারিখই দিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের কোষাঘারে টাকা জমা দিয়ে রশিদ নেয়ার জন্য তারা অফিসে আসছেন আর যাচ্ছেন। অতিসম্প্রতি তিনি বলেছেন উপজেলা ভূমি অফিসের কবির মিয়ার কাছে দিয়েছেন। সেখান থেকে খুঁজ নিতে হবে। সবশেষে জাহাঙ্গীর মিয়া ১৬ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা রেখে দেন। আর ১২ হাজার টাকা ফেরৎ দিয়ে বলেন, উপজেলা ভূমি অফিসের কাজ শেষ হলে আপনারা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে দিয়েন। আর আমি কাগজপত্র তৈরী করেছি তো তাই ৪ হাজার টাকা রেখে দিলাম।

নাম প্রকাশ করার শর্তে একাধিক ইউনিয়নের ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, প্রত্যেকটা নাম খারিজের জন্য কমপক্ষে ৪-৫ হাজার দিতে হয়। না দিলে যে কোন কারন দেখিয়ে কাগজপত্র ফেলে রাখেন। হবে হচ্ছে বলে ঘুরাতে থাকেন। আর অধিকাংশ নাম খারিজ ও দাপ্তরিক কাজের জন্য উপজেলা ভূমি অফিসের চেইনম্যান কবির মিয়ার পেছনে ছুটতে হয়। ভাবখানা এমন যেন উনিই অফিসের বড় কর্তা।

সরাইল সদর ইউনিয়নের উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর মিয়া টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, টাকায় আমি ধরি নাই। আমার বালিশের নিচেই এখনো আছে। আমি আরো আগেই বলেছি সমস্যা আছে কাজ হবে না। রেকর্ডে মিল নেই। যে কোন সময় এসে কাগজ ও টাকা নিয়ে যেতে পারেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, কোর্ট ফি সহ নাম খারিজের সরকারি জমা ১১৭০ টাকা। এর চেয়ে ১ টাকাও বেশী নেওয়ার বিধান নেই। কেউ বেশী টাকা নিয়ে থাকলে খুঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব।






Shares