Main Menu

সরাইলে ডাকাতের হামলায় গৃহকর্তা খুন, স্ত্রী গুরুতর আহত

+100%-

মোহাম্মদ মাসুদ :: সরাইলে ডাকাতের হামলায় গৃহকর্তা বৃদ্ধ আবু হান্নান চৌধুরী (৭০) খুন হয়েছেন। আর পিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছেন হান্নানের স্ত্রী ধনা বেগম (৬৫)। ডাকাতদের চিনে ফেলায় এ খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে ধারনা করেছেন স্থানীয়রা। উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দেওড়া পশ্চিম পাড়া চৌধুরী বাড়িতে বুধবার শেষ রাতের দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার রাতে ও তাদের বাড়ি সংলগ্ন টেনু মিয়ার (৬৩) বসতঘরের তালা ভেঙ্গে ডাকাতি করেছে ডাকাতরা। বৃহস্পতিবার সকালে সরাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস আগে হান্নান চৌধুরীর একমাত্র ছেলে দাগন চৌধুরীর (৩৫) একটি মটরসাইকেল তাদের ঘরের সামনে থেকে চুরি হয়ে যায়। পরে মটরসাইকেলটির সন্ধান মিলে। সামাজিক ভাবে লোকজন বসে বিষয়টির নিস্পত্তি হয়। এ ছাড়ায় ওই পাড়ায় ২/১টি বড় মাদকের আস্তানা গড়ে ওঠেছে। সেখানে অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে মাদক বিক্রি ও সেবনের কাজ। মাদক ব্যবসায়ি ও তাদের গড ফাদাররা শক্তিশালী হওয়ায় স্থানীয় লোকজন মুখ খোলার সাহস পায় না। সেখানকার মাদকাসক্তরা আশপাশে প্রায়ই চুরি ছিনতাই সহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। হান্নান চৌধুরীর ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে। মেয়েরা থাকেন শ্বশুড় বাড়িতে আর ছেলে দাগন চৌধুরী (৩৫) ঢাকায় চাকুরি করেন। শুধু বৃদ্ধ স্বামী স্ত্রীই থাকতেন ওই ঘরে। গত বুধবার রাত ৯টার দিকে হান্নান চৌধুরী ও তার স্ত্রী ধনা বেগম রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১০-১১টার দিকে ওই পাড়ার সকল বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ধারনা করা হচ্ছে শেষ রাতের দিকে ডাকাতরা সুযোগ বুঝে চারচালা ওই টিনের ঘরে পূর্বেই প্রবেশ করেছিল। এক সময় তারা যখন ঘুমে অচেতন। তখন ধনা বেগমের গলায় টিপে ধরে কানের দুল, নাকফুল ও গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায়। হাত পা ও বেঁধে ফেলে। পরে ডাকাতরা তাদের শোকেজের মালামাল বের করে নিচে ফেলে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার খুঁজতে থাকে। এ সময় হান্নান চৌধুরী একটু নড়াচড়া করার চেষ্টা করলে ডাকাতরা হাত পা রশি দিয়ে টাইট করে বেঁধে ফেলে। আর মুখের উপর সাদা কাপড় ফেলে বেঁধে দেয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় ও ঘাড়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ডাকাতরা। হান্নানের স্ত্রী ধনা বেগমও মারা গেছে মনে করে ডাকাতরা চলে যায়। ভোর ৬টার দিকে ধনা বেগমের বড় বোন পরিস্কার বোনকে দেখতে পেছনের খোলা দরজা দিয়ে প্রবেশ করে হান্নানের হাত পা বাঁধা রক্তাক্ত লাশ ও পাশে ধনা বেগমকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করতে থাকে। আশপাশের লোকজন এসে ধনা বেগমকে উদ্ধার সরাইল হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে ধনা বেগম আবুল তাবুল বলছেন।

ধনা বেগম বলেন, আমারে বানছে। হেরা ৫-৬ জন। দুইডা মানুষ গলাত টিপছে। ১টা মানুষ আমার সব জিনিষ নিছে। তাইনরে অ বানছে। এরপর আমার জানডা তরাশে গেছেগা। আর কুছতা কইতাম পারি না।

এদিকে নিহত হান্নান চৌধুরীর মৃতদেহ একনজর দেখার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে হাজার হাজার নারী পুরুষ তাদের বাড়িতে ভিড় জমায়।

দাগন চৌধুরী বলেন, আমার মটরসাইকেল চুরির ঘটনাটি সত্য। চোরও চিহ্নিত হয়েছিল। পরে সামাজিক লোকজন বসে বিষয়টি সমাধা করে দিয়েছিলেন। আমার বাবার তো কোন শত্রু নেই। কারো সাথে কোন বিরোধও নেই। কেন বাবাকে খুন করা হল? আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সরাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুরতহাল রিপোর্ট করে ময়না তদন্তের জন্য হান্নানের লাশ জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।

সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে ডাকাতদের চিনে ফেলার কারনেই তারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।






Shares