Main Menu

পুলিশ মিডিয়া মত বিনিময় : রমজানকে সামনে রেখে যানজট ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মুক্ত আলোচনা।।

+100%-

প্রতিনিধি:  ব্রাহ্মণবাড়য়িা শহরে যানজট একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। রমযান মাসে নানা কারণে যানজট সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারন করে। যা সর্বসাধারণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যানজট হ্রাসের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসনের  বিভিন্ন সংস্থা এ পর্যন্ত নানা কার্যক্রম গ্রহণ করলেও প্রত্যাশিত ফলাফল এখনো শহরবাসী পায়নি। বর্তমানে নানা কর্মকান্ড প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করায় যানজট বেড়ে গেছে এবং ক্রমশ এটি বাড়তেই থাকবে। আর এ অবস্থার পরিত্রাণের লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আজ এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার বিভিন্ন গনমাধ্যম্যের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে গত ৬ মাসের জেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিবরণ প্রদান করেন জেলা পুলিশ সুপার মহোদয় জনাব মোঃ মনিরুজ্জামান । বৈঠকে জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শাহ আলম বকাউল, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সফিকুল ইসলাম,সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুর রব।

পুলিশ সুপার মহোদয় প্রথমেই সবাইকে শুভেচ্ছো জানিয়ে উনার বক্তব্য প্রদান করেন। একে একে উনি আলোচনা করেন জেলার সামগ্রিক আইন অপরাধ কর্মকান্ডের পরিসংখ্যান ভিত্তিক তালিকা । এরপর উঠে আসে পৌর শহরের যানজট, ইভটিজিং, ছিনতাই ও অপহরণ সহ সমগ্র জেলার আইন শৃঙ্খলা  পরিস্থিতি।

যানযট নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করতে গিয়ে পুলিম সুপার মহোদয় বলেন, এক রাস্তার ছোট শহর এটি । এখানে এমনিতেই মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী। তার উপর প্রতিনিয়িত এ রাস্তায় নামছে নতুন নতুন ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক ও রিক্সা। ইজিবাইকের অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ। যন্ত্র চালিত নয় বলে এটাকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না বলে উনি জানান। এজন্য দরকার সামাজিক সচেতনতা। রাস্তার যানযটের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে উঠে আসে রাস্তার সংকীর্ণতা ও হকার সমস্যার কথা। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মহোদয় বলেন, শহরটি দুইভাবে বিভক্ত। ব্রীজের উত্তরাংশের রাস্তার চেয়ে দক্ষিণ অংশের রাস্তা অনেকটুক বেশি প্রশস্ত। মঠের গোড়া থেকে হাসপাতালের রাস্তাটি সবচেয়ে বেশি সংকীর্ণ। এখান থেকে হকারদের কয়েকবার উচ্ছেদ করা হলেও বিভিন্ন কারণে এদেরকে আবার বসতে দিতে হয়। এ প্রসঙ্গে দৈনিক যায়যায়দিনের সাংবাদিক বাহারুল ইসলাম মোল্লা বলেন, যেহেতু রমজান মাসে কোন বড় ধরনের সভা সমাবেশ নেই, সেহেতু মুক্ত মঞ্চের ময়দানে হকারদের সাময়িক বসার ব্যবস্থা করা যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া টোয়েন্টিফোরডটকম এর ব্যবস্হাপনা সম্পাদক আলী আসিফ গালিব বলেন, সম্প্রতি স্থানীয় সাংসদ কাজীপাড়া মৌলভীপাড়া সংযোগ সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্ভোধন করেন, কিন্তু বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা না করে ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলায় এদিক দিয়ে যাতায়াতকারী লোকজন বিশেষ করে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীরা এবং অভিভাবকরা বর্তমানে প্রধান সড়ক টি.এ রোড দিয়ে যাতায়াত করছে। এতে যানজট প্রচন্ড ভাবে বাড়ছে। কাজীপাড়া মৌলভীপাড়া সংযোগ সেতুর এলাকায় বিকল্প একটি পায়ে চলাচলের ব্যবস্থা করলে যানজট অনেকাংশে হ্রাস পাবে। যানযটের ভোগান্তির কথা বলতে গিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদ ইসলাম জানান, রোজাকে সামনে রেখে যানজটের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে পুলিশ প্রশাসন বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল, যান চলাচল একমূখী করা ও কয়েকটি রাস্তায় ইজি বাইক ও রিক্সা চলাচল বন্ধ করে দেয়া। তিনি আরও বলেন, এ বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার চেম্বার ও কমার্সের সাতে কথা বলা হবে এবং ব্যবসায়িক নেতাদের মতামত নেয়া হবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি :
উপস্থিত সবাই শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বর্তমানে ছিনতাই, ডাকাতির মত অপরাধের সংখ্যা হ্রাস পেলেও নতুন ধরণের অপরাধ এখানে গড়ে উঠছে। এ গুলোর মধ্যে প্রধান হল অপহরণ ও দালালী বাণিজ্য এ ছাড়াও গড়ে উঠেছে একটি নারী প্রতারক চক্র। বর্তমানে বিপুল পরিমান মহিলা এ পেশায় নিয়োজিত, সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট এর বোরকা পড়া অবস্থায় থাকে। সুযোগ পেলেই তারা মার্কেটে বা ব্যাংকে আসা মহিলাদের টাকা পয়সা, মোবাইল হাতিয়ে নিচ্ছে। একটি ঝুকিপূণ স্হানের কথা  ব্যাপার সবার চোখ এড়িয়ে গেছে, সেটি হল কোর্ট রোডস্থ ইসলামী ব্যাংক। এখানে প্রচুর মহিলা  গ্রাহক । এদর ৯০ ভাগই প্রবাসী স্বজনের টাকা তুলতে এখানে আসে। ইসলামী ব্যাংকের হিসাব মতে এই শাখায় তাদের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৩৫ হাজারের ও উপরে। এজায়গা গুলোতে নিরাপত্তা বিশেষ করে মহিলা পুলিশের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। সদর থানার ওসি মো. আবদুর রব সাহেব বলেন, এখানে যোগদানের পর দুইটি রমজান চলে গেছে, গত রমজান মাসের মত এবারও পুলিশ বাহিনী সচেষ্ঠ থাকবে। তিনি এ বিষয়ে সবাইকে সহায়তা করার অনুরোধ করেন। পুলিশ সুপার মহোদয় শহরে অপরাধের বর্ণণা দিতে গিয়ে বলেন, এখানে যোগদানের পরপরই আমি সিভিল পোষাকে সুলতানপুর আখাউড়া রোডে পর্যবেক্ষণ করি এবং দেখতে পাই দুই ঘন্টায় অত্র এলাকায় শতাধিক মটর সাইকেল আরোহী আসা যাওয়া করছে। তখন বুঝতে বাকি থাকে নাই যে, এরা সবাই মাদক সেবী। বয়স কম হওয়ার কারণে পুলিশ এদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করেনা কিন্তু মটর সাইকেলটি আইনের আওতায় নিয়ে আসে। যাতে অভিভাবক গন জানতে পারে ওনার ছেলের কি অপরাধ।
রোজাকে সামনে রেখে পুলিশ বাহিনী কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল ON CALL POLICING . বিশেষ মূহূর্তে তড়িৎ সাহায্য করার জন্য এই গ্রুপটি করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের লেন দেন করার সময় জেলা পুলিশকে জানানোর জন্য বলা হয়েছে। ছিনতাই সম্পর্কে তিনি বলেন, রাতে ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ পেট্রোল টিম করা হয়েছে। জেলা পুলিশ লাইনে একটি বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘটনাস্থলে পৌছুতে পারে।

একটি মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, কিছুদিন পূর্বে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় একজন ঢাকাগামী মেয়ে ছিনতাইকারীর সামনে পড়ে এবং তাকে ধরে নিকটবর্তী একটি গলিতে নিয়ে যায়। আল্লাহর অশেষ রহমতে কাছাকাছি টহল পুলিশ থাকায় মেয়েটি এযাত্রায় বেঁচে যায়। আমি অবাক হলাম এই ভেবে যে, একজন অভিবাবক কিভাবে মেয়েটিকে রাত্রে একা যেতে দিল। অপহরণ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে সব ক্ষেত্রেই পুলিশ অতি দ্রুততার সাথে অপরাধীদের ধরতে পেরেছে। অতি শ্রীঘ্রই এদের চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করা হবে। তিনি আরও বলেন, সর্ব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন সচেতনতা এবং নিরাপত্তার স্বার্থেই সবার উচিত পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা। তালিকাভূক্ত ছিনতাইকারীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, এ চক্রের ৬৪ জনের অধিকংশই এখন জেলে।

প্রেসক্লাব সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রেজা শ্রেষ্ঠ পুলিশ পদক পাওয়ায় অভিনন্দন জানান। অত্যান্ত খোলামেলা পরিবেশে এ আরোচনাটি অনেক প্রানবন্ত অবস্থায় শেষ হয়। পরিশেষে এসপি মহোদয় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বৈঠকের শেষ করেন।






Shares