Main Menu

সারা দেশে ৫৩ বন্দীর সাজা মওকুফ হচ্ছে, তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই কুখ্যাত ও দুর্ধর্ষ ডাকাত

+100%-


শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফসহ ৫৩ বন্দীর সাজা মওকুফ করে মুক্তি দিচ্ছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি এসব বন্দীর তালিকা চূড়ান্ত করেছে। মন্ত্রী ও সাংসদদের দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতেই এই তালিকা করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে। তালিকায় থাকা বন্দীদের মধ্যে বহুল আলোচিত খুনের আসামি ছাড়াও দুর্ধর্ষ ডাকাত ও অ্যাসিড ছোড়া মামলার আসামি আছেন।

এত বন্দী থাকতে বেছে বেছে কেন এসব দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বন্দীকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মুক্তি দেওয়া হচ্ছে? জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিতর্কিত কারও জন্য এ ধারা প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয়। এখন যে তালিকা করা হচ্ছে, তা নিয়মনীতি মেনেই হচ্ছে। এরপরও যদি কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থেকে থাকে, তবে সেটা বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ আছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুসারে কোনো বন্দী তাঁর সাজার মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ খাটলে, সেই বন্দীর বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ না থাকে, তবে সরকার চাইলে বিশেষ সুবিধায় তাঁকে মুক্তি দিতে পারে। এ জন্য রাষ্ট্রপতির কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। এই সুবিধায় মুক্তি দেওয়ার জন্য এ বছর দেশের সব কারাগার থেকে ২৯৭ বন্দীর তালিকা তৈরি করা হয়। বন্দীদের বয়স, সাজার ধরন, মেয়াদ, শারীরিক অবস্থা এবং কারাগারে তাঁরা কোনো অপরাধ করেছেন কি না, তা বিবেচনায় নিয়ে ৫৩ জনের নাম চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়। সেই তালিকা খতিয়ে দেখার জন্য (ভেটিং) আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। এরপর তা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে এক মাসের মধ্যে এসব বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ছোট অপরাধ, অসুস্থ কিংবা ভালো ব্যবহার বা কাজ করেছেন এমন বন্দীদেরই এ সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। শীর্ষ সন্ত্রাসী বা দুর্ধর্ষ ডাকাতেরা এ সুবিধা পাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, প্রশ্নই ওঠে না। এই ধারা তাঁদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী যেসব বন্দী মুক্তি পেতে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে আছে শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফের নাম। হত্যা, অস্ত্র মামলাসহ ১১ মামলার আসামি জোসেফ বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। ২০০৪ সালে তৎকালীন সরকার জোসেফসহ ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে। এর এক বছর পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জোসেফকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে। মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলায় ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল জোসেফের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। উচ্চ আদালত তা কমিয়ে যাবজ্জীবন বহাল রাখেন। এ ছাড়া একটি অস্ত্র মামলায় তাঁর ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়। কোনো জটিল রোগ ছাড়াই জোসেফ টানা ২০ মাস ধরে হাসপাতালে ছিলেন। এ নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। গত জুন মাসে কারা অধিদপ্তর জোসেফের সাজা মওকুফের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কুখ্যাত ও দুর্ধর্ষ দুই ডাকাতও মুক্তি পাচ্ছেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে পৃথক মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই কয়েদি প্রায় তিন দশক ধরে সাজা ভোগ করছেন। তাঁরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাইতলা উত্তর ইউনিয়নের নারুই গ্রামের বেদন মিয়া ও হিরণ মিয়া

১৯৯১ সালের ডাকাতি, ডাকাতিসহ খুনের দুটি মামলায় বেদন মিয়াকে ৩৮ বছরের সাজা দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালত।

অন্যদিকে ১৯৯২ সালের চারটি পৃথক মামলায় হিরণ মিয়াকে যাবজ্জীবনসহ ৫৮ বছরের সাজা দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালত। হিরণ মিয়ার আপন ছোট ভাই আজিজুল হক বর্তমানে উপজেলার কাইতলা উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

নবীনগর উপজেলার কাইতলা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে নোয়াগাঁও গ্রামের হিরণ মিয়াকে অস্ত্র ও ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁরা কুখ্যাত ডাকাত। এলাকাবাসী জানান, তাঁরা এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র দিয়ে ডাকাতি করতেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক নুরুন্নবী ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘদিন কারাভোগ ও আচার-ব্যবহারের বিষয়টি পর্যালোচনা করে সরকার তাঁদের ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে।

এভাবে বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ক্ষমতায় এসব বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার যে সুযোগ আছে, তা প্রয়োগ করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। যাঁরা ফৌজদারি অপরাধ করেছেন, খুন করেছেন, যাঁরা বিতর্কিত বা শীর্ষ সন্ত্রাসী, আদালত যাঁদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন, তাঁদের এই সুবিধায় মুক্তি দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না।






Shares