Main Menu

পয়াগ গ্রামের জহিরুল হক হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৩

সরকার ও আইনের নিকট স্বামী হত্যার বিচার প্রার্থী স্ত্রী খোদেজা বেগম

+100%-

payagস্টাফ রিপোর্টার ॥ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলাধীন পশ্চিমাঞ্চলের ০৯নং নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নে অবস্থিত গ্রাম পয়াগ। এক সময় এখানে ছিল শান্তির সুবাতাস। কিন্তু বিগত ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড মেম্বার নির্বাচন কেন্দ্র করে পয়াগ গ্রামের আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ প্রতিদ্বন্দ্বি ২ মেম্বার পদপ্রার্থী মোঃ সিরাজুল ইসলাম এবং বসু মিয়ার পক্ষে সৃষ্টি হয় বিরোধ। নির্বাচনে জনতার ভোটে ওয়ার্ড মেম্বার নির্বাচিত হন মোঃ সিরাজুল ইসলাম। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে জয় পরাজয় নির্ধারিত থাকা সত্বেও সম্পূর্ণ অনাকাংখিতভাবে ভোটের পরাজয় মেনে নিতে পারেন নি প্রতিদ্বন্দ্বি বসু মিয়ার পক্ষ। যার ফলে, আত্মীয়তার বন্ধন উপেক্ষা করে তারা বিরোধে লিপ্ত হন বিজয়ী মেম্বার মোঃ সিরাজুল ইসলামের পক্ষের সাথে। বিশেষ করে তাদের সব আক্রোশ গিয়ে পড়ে সিরাজের চাচাতো ভাই পয়াগ নরসিংসার এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব আওয়ামী লীগ নেতা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের জগৎ বাজারের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী মোঃ জহিরুল হক এর উপর। কারণ, তিনি বিগত ইউনিয়ন পরিষদ ওয়ার্ড মেম্বার নির্বাচনে চাচাতো ভাই মোঃ সিরাজুল ইসলাম এর পক্ষে ভোট দিতে বেশীর ভাগ নারী পুরুষ ভোটারদের উৎসাহিত করেন।যার ফলশ্র“তিতে বসু মিয়া পক্ষের নিয়োজিত ভাড়াটে সন্ত্রাসী কর্তৃক ধারালো অস্ত্রাঘাতে গত ১৪ নভেম্বর দিবাগত রাত ৭টায় দোকান থেকে বের হয়ে অটোরিক্সাযোগে ছোট ছেলে মোঃ সবুজ আহমেদ ও ভাই কবির হোসেনকে সাথে নিয়ে পয়াগ গ্রামের বাড়িতে ফেরার পথে শহরতলীর দাড়িয়াপুর নামক স্থানে নির্মমভাবে নিহত হন মোঃ জহিরুল হক।

গ্রামবাসী, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া মডেল থানায় কবির হোসেন বাদী হয়ে দায়েরকৃত মোঃ জহিরুল হক হত্যা মামলার বিবরণে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে সদর আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, রাজনীতিবিদ শফিকুল আলম এমএসসি, চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি, ব্যবসায়ী সমাজসহ সচেতন মহল স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রদত্ত বিবৃতিতে এই অনাকাংখিত হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতার পূর্বক আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। বর্তমানে পয়াগ গ্রামে অস্বাভাবিক নিরবতা বিরাজ করছে।
এই ঘটনার ফ্লাশব্যাক ও বর্তমান পরিস্থিতি জানতে গত ৩০ নভেম্বর বুধবার দুপুরে সরেজমিন পয়াগ গ্রামে ঢুকতেই ভীত নিরীহ বেশ কয়েকজন যুবক ডিজিটাল ক্যামেরা মোবাইল ফোনে ধারনকৃত বোরকা পড়া কতিপয় যুবতী কর্তৃক তাদের পিত্রালয়ের পুরুষশুন্য বসত বাড়ির ব্যবহার্য মালামাল ভ্যানগাড়ী যোগে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ছবি দেখান। এটি কিসের ছবি জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, এটি নিহত মোঃ জহিরুল হক হত্যা মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে পুরুষশূন্য পলাতক বসু মিয়াগং এর বাড়িঘরের মালামাল গত কয়েকদিন অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ছবি। এতে বর্তমানে পয়াগ গ্রামে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে।

গ্রামবাসীর সহায়তায় খুঁজে বের করে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার মোঃ জহিরুল হক এর বাড়িতে ঢুকতেই সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বসত ঘরে শুরু হয় সদ্য বিধবা স্ত্রী শোকাহত খোদেজা বেগম, ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা হালিমা খাতুন আর ২ ছেলে মোঃ সোহরাব আহমেদ এবং সবুজ আহমেদের বুক ফাটা গগনবিদারী আর্তনাদ। নিজেদের সামলে নিয়ে তাদের অভিব্যক্তি জানতে চাইলে আর্তনাদ শুনে ভীড় জমানো প্রতিবেশীদের উপস্থিতে শোকাতুর স্ত্রী খোদেজা বেগম হত্যা মামলার মূল আসামীরা তার চাচা সম্বোধন করে চাচা হয়ে কিভাবে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে ভাতিজীকে বিধবা করে ভাতিজী জামাইকে হত্যা করলো সে প্রশ্ন রেখে কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন, “সরকার এবং আইনের কাছে আমি আমার স্বামী খুনের বিচার চাই। মার্ডারের সাথে জড়িত সবার ফাঁসি চাই।” কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি ও ছেলেরা হত্যা মামলার আসামীদের নাম উল্লেখ করে তারা ভাড়াটে লোক দিয়ে কিভাবে জহিরুল হককে ১৪ নভেম্বর রাতে হত্যা করা হয়েছে সে হৃদয় বিদারক ঘটনার বর্ণনা দেন। ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা হালিমা খাতুন বলেন, “আমি আর কিছু চাই না। আইন আর সরকারের কাছে আমার বাবা (ছেলে জহিরুল) খুনের ন্যায় বিচার চাই।” মেয়ের অভিব্যক্তি জানার জন্য খোঁজা হলে জানা যায়, ১৮ দিন যাবত কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ডাক্তারের চেম্বারে পাঠানো হয়েছে। গ্রামবাসী নারী পুরুষরা জানান, নির্বাচন কেন্দ্রিক বিরোধ নিয়ে উভয় পক্ষের হামলা পাল্টা হামলা ঘটনায় সম্প্রতি নরসিংসার বোর্ড বাজারে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে ভাইস চেয়ারম্যান মহসিন মিয়াসহ এলাকার সর্দার সালিসকারকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতে আয়োজিত মিমাংসা বৈঠকে উভয় পক্ষকে জরিমানা করে উপজেলা চেয়ারম্যানের হাতে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে টাকা বুঝিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। ৭ নভেম্বর সিরাজুল ইসলাম মেম্বারের পক্ষ থেকে জরিমানার টাকা বুঝিয়ে দিলেও বসু মিয়ার পক্ষ টাকা না দিয়ে জমা দেয়ার শেষ দিনের আগের দিন রাতেই উল্টো মোঃ জহিরুল হককে খুন করে ক্ষোভ মেটায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মোঃ মঈনুর রহমানের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, জহিরুল হক হত্যা মামলায় তাৎক্ষণিক ২ জন এবং পরে মোখলেছ নামে একজনসহ ৩ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ দিবারাত টহল দিচ্ছে।






Shares