Main Menu

নাসিরনগরের সাবরেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ঘুষ ছাড়া কাজ না করার অভিযোগ

+100%-

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর উপজেলার সাবরেজিষ্ট্রার মিজহারুল ইসলামের ঘুষ-অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভূক্তভোগীরা। গত ২৬ আগস্ট উপজেলার ১২জন ভূক্তভোগী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগে সাবরেজিষ্ট্রারের ঘুষ-দুর্নীতির ৪০টি অভিযোগের কথা উল্লেখ করেন তাঁরা। ১২ জন ভুক্তভোগীর করা ওই অভিযোগে সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী সাইফুল ইসলামের দুর্নীতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ভূক্তভোগীদের মধ্যে আহাম্মদ হোসেন সাবরেজিষ্ট্রারের অনিয়ন-দুর্নীতির বিষয়ে জেলা রেজিষ্ট্রারের কাছে গত ২৩আগস্টও একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি তোলার জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ২৭০ টাকা। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে এর জন্য সেবা গ্রহীতাকে গুণতে হয় দেড় হাজার টাকা। আর সরকারি ফি’র বাইরে পুরো টাকাটাই যাচ্ছে সাব রেজিস্ট্রার মিজাহারুল ইসলামের পকেটে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সাফ কবলা দলিলের মূল্য এক হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হলে সরকারি ফি’র বাইরে সেরেস্তা বাবদ আড়াই হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে। আর যদি দলিলের মূল্য এক লাখ টাকা বা অধিক মূল্য হয়, তাহলে প্রতি লাখে তিনশত টাকা করে বেশি দিতে হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের হেবা ঘোষণা দলিলের মূল্য যতই হোক না কেনো, সরকারি ফি ৬৫০ টাকা। কিন্তু এক হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হলে তিন হাজার ৩০০ টাকা সেরেস্তা বাবদ ঘুষ দিতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের। আর এক লাখ টাকার বেশি মূল্য হলে প্রতি লাখে অতিরিক্ত আরও ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়ে থাকে। একই ভাবে হিন্দু সম্পদায়ের দানের ঘোষণা দলিল মূল্যের উপর সরকার নির্ধারিত ফিও ৬৫০ টাকা। কিন্তু এক হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হলে তিন হাজার ৩০০ টাকা সেরেস্তা বাবদ ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া এক লাখ টাকার অধিক মূল্য হলে প্রতি লাখে দিতে হয় অতিরিক্ত আরও ৩০০ টাকা।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, বিনিময় দলিল করতে ব্যাংক চালানের পরও অতিরিক্ত চার/পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে সাব রেজিস্ট্রার মিজাহারুলকে। এরপর সেরেস্তা বাবদ প্রথম লাখে আড়াই হাজার এবং পরবর্তীতে প্রতি লাখে ৩০০ টাকা করে ঘুষ দিতে হয় গ্রাহককে। বন্টননামা এবং অসিয়ত দলিলের মূল্যের উপরও অতিরিক্ত এক শতাংশ হারে ঘুষ নেন সাব রেজিস্ট্রার মিজাহারুল।

এসএ/বিএস খতিয়ান যদি তহসিল অফিসের হয় তাহলে সাব রেজিস্ট্রারকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। যদিও তহসিল অফিসের এসব খতিয়ান দিয়ে দলিল না করতে প্রজ্ঞাপন জারি রয়েছে। এছাড়া দলিলের মূল কপি ছাড়া দলিল করতে গ্রাহক ফটোকপি নিয়ে আসলে সাব রেজিস্ট্রারকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এসএ এবং বিএস খতিয়ানের সার্টিফিকেট কপি জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুম থেকে সংগ্রহ করার পরও দলিল করতে গেলে ‘এটি সঠিক নয়’ জানিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন সাব রেজিস্ট্রার মিজাহারুল।

দলিল লেখকের সাথে সাব রেজিস্ট্রারের খাস কামরার দরজা বন্ধ করে প্রতিজনের সাথে আলাদাভাবে প্রতিটি দলিলের জন্য আলাদা-আলাদা চুক্তি করতে হয়। খাস কামরায় থাকা নৈশ প্রহরী সাইফুলকে দিয়ে দলিল লেখকদের সাথে টাকা লেনদেন করেন। নৈশ প্রহরী সাইফুল ইসলামের দায়িত্ব রাতের বেলা হলেও সারাদিন সাব রেজিস্ট্রারের সাথে থাকেন ঘুষ লেনদেনের জন্য।

মো. সালাহ উদ্দিন নামে এক দলিল লেখক সাব রেজিস্ট্রারের ঘুষ-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাকে বহিস্কারের জন্য অন্য দলিল লেখকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায় করেন সাব রেজিস্ট্রার। স্থানীয় সাংসদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রামের কথা বলে প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে বলে দলিলের সেরেস্তা বাবদ ঘুষ বৃদ্ধি করে। কিন্তু এমপি সৎ মানুষ জানিয়ে সালাহ উদ্দিন প্রতিবাদ করলে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে হুমকি দেন সাব রেজিস্ট্রার। এ সময় সাব রেজিস্ট্রার ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন- ‘টাকা কি আমার পকেট থেকে দিব নাকি?, এমপি’কে টাকা দিতে দিতে ফকির হয়ে গেছি।’ এ ঘটনার পর দলিল লেখক ও নৈশ প্রহরী সাইফুলকে দিয়ে সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করান সাব রেজিস্ট্রার মিজাহারুল।

সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের একজন নাসিরনগর উপজলো সদরের বাসিন্দা মিহির দেব বলেন, চার-পাঁচ মাস আগে আমি একটি বাড়ির দলিল করতে গিয়েছিলাম সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে। সাব রেজিস্ট্রার আমার কাছে মোট অংকের টাকা দাবি করেন। পরে ২০ হাজার টাকা দিয়ে দলিল করেছি।
আরেক অভিযোগকারী ও দলিল লেখক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, আমি দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় আমার লাইসেন্স বাতিলের জন্য অন্য দলিল লেখকদের কাছ থেকে জোর করে সাক্ষর নিয়েছেন সাব রেজিস্ট্রার। সাক্ষর না দিলে কারো দলিল রেজিস্ট্রি করবেন না বলে হুমকি দেন।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে নাসিরনগর উপজেলা সবা রেজিস্ট্রার মিজাহারুল ইসলাম বলেন, আপনারা অভিযোগুলোর ব্যাপারে তদন্ত করেন। যদি সত্য হয় তাহলে অবশ্যই আমার বিরুদ্ধে লেখবেন। তবে সত্য লিখেবন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, তার (মিজাহারুল) অফিসে কিছু জটিলতা তৈরি হওয়ার কারণেই এগুলো হচ্ছে। তারপরও অভিযোগগুলো আমরা তদন্ত করে দেখব। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগগুলো আমরা যাচাই করে দেখছি। সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।






Shares