Main Menu

ইউপি নির্বাচন ২০১৬:: মন-পছন্দের প্রার্থী

+100%-
up election

মন-পছন্দের প্রার্থী হয়ে উঠেছেন তারা। বয়সে তরুণ, নতুন মুখ। সর্বোপরি পরিচ্ছন্ন ইমেজ, রাজনৈতিক-পারিবারিক অবস্থান, নিঃস্বার্থ সেবার মনোভাব ভোটারদের মনে জায়গা করে দিয়েছে তাদের। স্বপ্নের জাল বুনছেন ভোটাররা এ চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নিয়ে। ভোটের লড়াইয়ে আসার আগে থেকেই এলাকার মানুষের পাশে ছিলেন অর্থেবিত্তে বলীয়ান এ প্রার্থীরা। অপেক্ষা এখন দলীয় মনোনয়নের। ভোটাররা বলছেন তারা পাস করলে আমরা লাভবান হবো। আর সেকারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে তরুণ আর নতুন মুখের আবেদন এখন তুঙ্গে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নে বড় দুদলের সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা ৬ কি ৭। এর মধ্যে আওয়ামী লীগেরই মনোনয়ন প্রার্থী ৪ জন। কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন মোহাম্মদ শাহ আলম। পরিচ্ছন্ন ইমেজের তরুণ এ রাজনীতিক জনসংযোগ আর প্রচারণায় এগিয়ে অনেক।  ইউনিয়নের ছোট হরন গ্রামের আরশ মিয়া বলেন, শাহ আলম সবার চেয়ে জনপ্রিয়। তারে নমিনেশন দিলে এক ডাকে পাস। মানুষ একচেটিয়া ভোট দেবে তারে। শাহ আলম জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। ছাত্রজীবনে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে। জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও ছাত্র ইউনিয়নের জাতীয় পরিষদ সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তার রয়েছে হাউজিং ও ব্রিক ফিল্ডের ব্যবসা। কালীসীমা গ্রামের হাজি আবদুল মালেকের ছেলে শাহ আলম। ওই ইউনিয়নের একটি বৃহৎ গোষ্ঠীর সন্তান হিসেবে তার অবস্থান এলাকায় অনেক সুসংহত। তাছাড়া ব্যক্তিগত ইমেজের কারণে ইউনিয়নের সবার কাছে রয়েছে গ্রহণযোগ্য। সরজমিন ওই ইউনিয়নের নরসিংসার, সিন্দুউড়া, গাছতলা, পয়াগ, বড়হরন, ছোটহরন ও বিলকেন্দুয়াই গ্রামের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, শাহ আলম সবদিক দিয়ে যোগ্য। কোনো অন্যায়-অপরাধে সম্পৃক্ত নন। একেবারেই পরিষ্কার মানুষ। নরসিংসার গ্রামের মোতালেব বলেন, ভালো প্রার্থী শাহ আলম। তারে চেয়ারম্যান বানাইলে এলাকার কাম-কাজ অইবো। তার নিজের অনেক আছে। সে আমাদেরটা মাইরা খাইবো না। আর বড় কথা সে খুব ভালো লোক। তার যোগ্যতা আছে। তাই আমার মতো গোটা ইউনিয়নের মানুষই চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে চান। মোহাম্মদ শাহ আলম দলের মনোনয়নের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন।
ফেসবুক আইডি তার জনপ্রিয়তার সাক্ষী। সেখানে আপলোড করা ছবিতে রয়েছে তাকে ঘিরে এলাকার সাধারণ মানুষের আবেগ-ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। জনসংযোগের বিস্তর ছবি। মো. ইশতিয়াক আহমেদ দুলাল। সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী। দীর্ঘ ২০-২২ বছরের প্রবাস জীবনে দুলাল এখন প্রতিষ্ঠিত। নিজে দেশে চলে এলেও দেশের বাইরে রয়েছে তার  নিজস্ব ব্যবসা। এলাকার লোকজন জানান, দুলাল নতুন নয়, এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে, বিদেশ থাকাকালেই। এলাকার মসজিদ, মাদরাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোথায় সহায়তার হাত বাড়াননি তিনি। গরিব-অসহায় মানুষজনকে সহায়তা করার গল্প আছে অনেক। প্রতিদিনই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তাদের প্রতি। সেই দুলাল ভোটের মাঠে আসার পর লুফে নেন সবাই তাকে। তার ফেসবুক আইডিতে ঢুকলে আঁচ করা যায় তাকে নিয়ে মানুষের আবেদনের মাত্রা। তার সমর্থকরা বলছেন, দুলাল বয়সে তরুণ, ক্লিন ইমেজ। তাছাড়া এলাকার মানুষ বিশ্বাস করেন, দুলাল চেয়ারম্যান হলে আরও অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবেন তারা।  আর সে কারণেই এলাকার মানুষ তার জন্য পাগল হয়ে উঠেছেন। মৈন্দ গ্রামের (বড়বাড়ি) বাসিন্দা দুলালের পিতা হাজি হারুন আল রশিদ ছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সদস্য এই তরুণ সমাজসেবী দলের মনোনয়নের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন।  দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় তিনি।
নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নে সাড়া ফেলেছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি। ভোটের মাঠে নতুন হলেও সমাজসেবী হিসেবে এ তরুণের সুনাম ছড়িয়ে আছে গোটা ইউনিয়নে আরও আগে থেকেই। হরিপুর ইউনিয়নের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান আঁখি। তার পিতা দেওয়ান মশিউর রহমান (জজ মিয়া) স্বাধীনতা-পরবর্তী এ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে জয়ী হতে না পারলেও আমৃত্যু এলাকার অসহায়-দরিদ্র মানুষের পাশে থেকেছেন। পিতার একজন যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে আঁখিও সমাজসেবায় নিবেদিত দীর্ঘদিন ধরে। হরিপুর ইউনিয়নের লোকজন জানিয়েছেন, তাদের ইউনিয়নে ১৫ বছর ধরে একজনই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এমনি অবস্থায় ভোটারদের আবেদন ছিল একটি নতুন মুখের। আর সেই নতুন মুখ হিসেবে আঁখিকে পেয়েছেন তারা। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী একাধিক। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পিতার ভূমিকার কারণে বিতর্কিত হয়ে উঠেছেন এক প্রার্থী। তাকে নিয়ে হচ্ছে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন। ওই প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বড় পদে থাকায় তার অপসারণের দাবিতেও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন কোনো স্বাধীনতা বিরোধী বা তার সন্তান দলের মনোনয়ন পাবে না। আঁখির সমর্থকরা বলছেন, সবদিক বিবেচনায় আমরা আশাবাদী দলের মনোনয়ন আঁখিই পাবেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের মাছিহাতা ইউনিয়নের উপনির্বাচনে অল্প ভোটেই  হেরেছিলেন আল আমিনুল হক পাভেল। প্রতিদ্বন্দ্বী বাঘা বাঘা প্রার্থীকে পেছনে ফেলে চমক দেখিয়েছেন তিনি ওই নির্বাচনে। পরাজিত হলেও মাঠ ছেড়ে যাননি এই কবছর। ঘুরে বেড়িয়েছেন গ্রামের পথে পথে, মানুষের মাঝে। আর এভাবেই বয়সে  তরুণ এই প্রার্থী ভোটারদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পাভেল দলের মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন। শুধু নিজের ইমেজ নয়, সঙ্গে আছে পিতার গর্বিত কর্মজীবন। পাভেলের পিতা মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক হামদু মাছিহাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন দীর্ঘ সময়। তিনবার ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। পাশাপাশি মাছিহাতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন হামদু । পরে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এবং ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। হামদু জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। পিতার রাজনীতি আর জনসেবার নেশায় উজ্জীবিত পাভেল। পিতার মতো মানুষের জন্যে কাজ করার, সুখে দুঃখে পাশে থাকার ইচ্ছে থেকেই নেমেছেন ভোটের মাঠে। গ্রামের মানুষের আপনজনে পরিণত হয়েছেন পরিচ্ছন্ন ইমেজের এ তরুণ সমাজসেবী। তার সমর্থকরা বলছেন দলের মনোনয়ন পেলে পাস নিশ্চিত।
নবীনগরের বড়াইল ইউনিয়নের জনপ্রিয় মুখ মো. জাকির হোসেন। ১৯৯৭ সালে প্রথম ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন তিনি। তখন তার নিজ গ্রাম বড়াইল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন তিন জন। এরপরও সামান্য ভোটে পরাজিত হন জাকির। ২০১১ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় হন। এবার দলীয়ভাবে নির্বাচন হবে বলে আশাবাদী জাকিরের সমর্থকরা। তারা বলেন, বড়াইল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অবস্থান খুবই সুসংহত। দলের মনোনয়ন পেলে জাকিরের জয় নিশ্চিত। দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে পরিচিত জাকির। সে কারণে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা প্রার্থী হিসেবে তাকেই পেতে চাইছেন। সাধারণ মানুষও চাচ্ছেন চেয়ারম্যান হিসেবে সহজ সরল মানুষ হিসেবে গণ্য জাকিরকে। জাকির দ্বিতীয়বারের মতো বড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এবার কাউন্সিলরদের সর্বোচ্চ ভোটে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। কাউন্সিলে মোট ভোট ছিল ১৫০টি। এরমধ্যে ১০৯ ভোট কাস্ট হয়। সভাপতি পদের ৫ প্রার্থীর মধ্যে জাকির একাই পান ১০৭ ভোট। বাকি ৪ জনের মধ্যে ২ জন পান ২ ভোট । ১৯৯৭ সালে নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নির্বাচিত হন জাকির। ছিলেন উপজেলা যুবলীগ সদস্য।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নে ভোটের মাঠে রয়েছেন আরেক তরুণ সমাজসেবী মো. আবু নাসের। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলের কাছে মনোনয়নের জন্যে আবেদন করেছেন তিনি। সবার কাছে নাসেরের বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে জানিয়ে তার সমর্থকরা বলেন, আপদে-বিপদে সবসময় পাশে পাওয়া যায় তাকে। রাত গভীরেও ডাক পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। নাসের এলাকায় গ্যাস সংযোগ বাস্তবায়নের নেতা। ছাত্রবন্ধু, সপ্তর্ষী ইত্যাদি সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমেই সমাজসেবায় হাতেখড়ি তার। ছাত্র রাজনীতিতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। জেলা উন্নয়ন পরিষদ, জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য নাসের। ১৯৯০ সালের পর থেকে নিরলসভাবে এলাকার মানুষের পাশে রয়েছেন তিনি। নাসেরের একজন সমর্থক রাজঘর গ্রামের আবদুল হাই বলেন, ইউনিয়নের ছেলে বুড়ো সবাই চান নাসের চেয়ারম্যান হোক। তার সমর্থক দল-বিদলে সবাই। নাটাই উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নাসের একজন সত্যিকারের সমাজসেবী। মনে রাখার মতো মানুষের অনেক উপকারই করেছে সে। সর্বস্তরের মানুষেরই পছন্দ তাকে। নাসেরের পিতা আবদুস সালাম জারু মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিউ মার্কেটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আবদুস সালামের নামে এলাকায় রয়েছে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নাটাই গ্রামে গোষ্ঠী বিবেচনাতেও নাসেরের ভিত অনেক শক্ত।সূত্র:: জাবেদ রহিম বিজন,মানব জমিন






Shares