Main Menu

একটু আদর করবেন? একটু আদর? _সহকর্মীর স্ত্রীকে গ্যাসফিল্ড স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ভাদুরী

+100%-

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্যাসফিল্ড স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের নারী কেলেংকারীর ঘটনা টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। রবিবার বিদ্যালয়ের গভর্নিং কমটিরি সভায় অধ্যক্ষের নারী কেলেংকারির বিষয়টি প্রমাণিত হলে বিশ্বজিৎ ভাদুরী নামের ওই অধ্যক্ষ অপরাধ স্বীকার করে পদত্যাগ করেন। এঘটনাকে ন্যক্কারজনক বলে মনে করছে বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড কর্তৃপক্ষ। এদিকে অভিযোগ পেলে ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মনিরুজ্জামান পলাশের প্রতিবেদনে পড়ুন বিস্তারিত।

মোবাইল ফোনের কথোকপথন। “প্রশ্ন : ইহসাক সাহেব কোথায়? উত্তর আসলো, ইহসাক সাহেব বাইরে আছেন, আবারো প্রশ্ন : এখনও বাইরে আছেন? উত্তর আসলো, হুম মার্কেটে গেছেন বাচ্চাদের নিয়ে। প্রশ্ন : আচ্ছা, আচ্ছা, এখন সবাই তাইলে বাইরে গেছে? উত্তর : হুম। পরের প্রশ্ন : ও তাহলে আমি আসব? উত্তরে প্রথম বার এসো, পরে একটু হেসে উত্তর আসলো আসেন ভাবিকে নিয়ে আসেন। এরপর প্রায় ৬ মিনিট ধরে এ ধরনের কথাবার্তা চলল তাদের মধ্যে। এরপর পুরুষ কন্ঠটি প্রশ্ন করলেন, এখন ঘুমাবো? নারী কন্ঠের উত্তর : হুম, তাহলে ঘুমিয়ে পড়ুন, খোদা হাফেজ। এবার প্রশ্ন আসলো , একটু আদর করবেন? একটু আদর? এবার নারী কন্ঠের উত্তর আপনি আছেন এক প্রান্তে আর আমি এক প্রান্তে, কথা শেষ না হতেই পাল্টা প্রশ্ন তাহলে আমি দেই? উত্তরের আগেই উমম উমম চুমু জাতীয় শব্দ। নারী কন্ঠের প্রশ্ন এটা কি হল? উত্তর আসলো এটা ভাল হল।

এভাবেই সহকর্মীর স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দিতে শুনা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নামী দামি স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ভাদুরীকে। কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ ভাদুরীর নামে অভিযোগ দেন একই কলেজের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ ইহসাকের স্ত্রী রেহেনা বেগম। এ অভিযোগের প্রমাণ সরুপ ৯ মিনিটের একটি অডিও বার্তাও দেন তিনি। অবশ্য অভিযোগ পত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন কুপ্রস্তাবের প্রমাণ রাথতে তিনি সে দিন এই ভাবে কথা বলেছেন। রবিবার গভর্নিং বডির সভায় এ বিষয়ে অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অভিযোগ মেনে নিয়েক পদত্যাগ করেন।

অভিযোগ পত্র থেকে জানা যায়, অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ভাদুরী ও সিনিয়র শিক্ষক ইহসাক একই ভবনের ৪র্থ ও ৫ম তলাতে থাকতেন। তাই তাদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক ছিল। তাই প্রিন্সিপাল ভাদুরী বিভিন্ন সময় তাদের বাসায় আসা যাওয়া করতেন। তবে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অধিনস্ত ইহসাককে বিভিন্ন কাজে অফিসে ব্যস্ত রাখতেন এবং ফাঁকা বাসায় রেহেনা বেগমের সাথে দেখা করতে চাইতে। বিষয়গুলো ভাল না লাগায় রেহেনা ভাদুরীকে এড়িয়ে চলতেন। তবে সম্পতি সদর উপজেেলার চিনাইরে একটি বৃত্তির অনুষ্ঠানে রেহেনার মেয়ের বৃত্তি আনতে গেলে কৌশলে ভাদুরীর স্ত্রীকে ওয়াশরুমে নিয়ে যেতে রেহেনাকে অনুরোধ করে। ভাদুরীর স্ত্রী ওয়াশরুমে ঢুকলে পেছন থেকে তিনি রেহেনাকে জড়িয়ে ধরে শ্লীলতাহানি করে। বিষয়টি পরিবারের অন্যান্যদের সাথে শেয়ার করলে তারা ভাদুরীর কুপ্রস্তাবের প্রমাণ রাখতে কৌশলী হোন।

এ ব্যাপারে গ্যাসফিল্ড স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নসিমুজ্জামান তালুকদার বলেন, উনার বিরুদ্ধে নৈতিক স্থলন জনিত একটি অভিযোগ আসছে আমাদের কাছে, লিখিত। এক ভদ্র মহিলা দিয়েছেন যিনি আমাদেরই কলেজের একজন শিক্ষকের ওয়াইফ (স্ত্রী)। আসার পর আমরা গভর্নিং বডির সবাই বসেছিলাম। প্রিন্সিপাল নিজেও গভর্নিং বডির একজন সদস্য। তখন উনাকে আমরা অভিযোগের কাগজটা দিয়ে পড়তে বলি। অভিযোগের সাথে আমাদের একটি অডিও দেয়া হয়। এসব তাকে দেখিয়ে ও শুনিয়ে আমরা জিজ্ঞেস করি আপনিও গভর্নিং বড়ির সদস্য। আপনি হলে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিতেন? তিনি বললেন আমি হলে সেক (চাকুরিচ্যুত) করে দিতাম। আমরা তখন বলি এখন আপনার সিদ্ধান্ত বলেন কি করবেন। তখন তিনি প্রতিষ্ঠানে স্বার্থে নিজ থেকে পদত্যাগ করেন।

তবে এ কুপ্রস্তাবকে দুষ্টামি উল্লেখ করে নিজেকে ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেন অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ভাদুরী। তিনি বলেন, পরিবারগত বিষয় নিয়ে আমরা দুষ্টামি করতাম, হৈচৈ করতাম কোন এক সময়। তার স্বামীও জানতেন এগুলো। তো দুষ্টামি করতে গিয়ে তিনি একটা টেপ রেকর্ড করে আমাকে এ ষড়যন্ত্র করেন। অধ্যক্ষ ভাদুরী তার এ অবস্থার জন্য গ্যাসফিন্ডের সিবিএ নেতাদের দায়ী করেন। তিনি বলেন, আমি আসার আগে স্কুলে ভর্তি বাণিজ্য চলত। আমি গত চার বছর ধরে এগুলো বন্ধ করে রেখেছি। তাই সিবিএ নেতারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। কর্তৃপক্ষ তাকে এ ভাবে চাকুরীচ্যুত করতে পারেন না বলে দাবি করেন তিনি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, অধ্যক্ষের পদে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ হয়ে থাকে।

এদিকে এ ঘটনায় গ্যাসফিল্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন এ ঘটনায় বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ডের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। তারা বলছেন , যিনি অনৈতিকতার দায়ে দোষী , তিনি তো অধ্যক্ষের দ্বায়িত্বে থাকতে পারেন না।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড লিমিটেডে মানব সম্পদ বিষয়ক ব্যবস্থাপক মো. শাহআলম বলেন, এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল, গ্যাসফিল্ডে কর্মরতদের সন্তানরা যাতে ভাল লেখাপড়ার সুযোগ পায়। পাশাপাশি আশপাশের মেধাবীরা যাতে ভাল পড়ার সুযোগ পায়। তবে প্রিন্সিপাল সাহেবের এ কাজে আমাদের স্কুলের এবং কোম্পানির মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি নবীর হোসেন জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন তারা।

এদিকে রবিবার দুপুরে এ কলেজের শিক্ষার্থীরা এ ঘটনায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।






Shares